মানুষের মতন বিবেকে

আঞ্জিরদেশের এক ধূসর ফতুয়া প’রে
এই সব পাহাড়বিহীন নম্র দেশে
লোকটাকে দেখা যেত রোজ ভোরে
মরণের চেয়ে কিছু কম নিরুদ্দেশে

চ’লে যায়- আবার মৃত্যুর থেকে ফেরে
যখন আকাশে চাঁদ মুস্তারি পারবীন
চ’লে আসে ঘাসের শিশির পায়ে মেখে
বাতাসের মতন স্বাধীন

অন্যতর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকে
দিন-রাত উত্তেজিত ঘড়ির শাসনে
ভোরের মানুষটাকে এক দিন আধ দিন
রাতের মোমের কাছে মনে

প’ড়ে যেত;- আঙুল বুলায়ে নিয়ে চোয়ালের ‘পর
তখুনি যেতাম ভুলে হাড় কী জিনিস
চোখের তারায় এক লোক রয়ে গেছে
আমার চিন্তার সাথে তার সুপারিশ

ফ্যাকাশে আলোয় হিম মাকড়ের জালের মতন
বোলতা’র মতো যেন বিকেলবেলার রৌদ্রের
এমন নিকট দিয়ে বার-বার ঘুরে যায় ব’লে
এরা নেই; এদের মতন সেই ফিকে মানুষের

জন্ম যেন হয় নাই কোনও দিন পৃথিবীতে
পরিপৃক্ত এঞ্জিনের মতন হৃদয়ে
সব সিঁড়ি, বাতাস, লেজার, ডেস্ক, প্রেম
তাদের দিনের পাপক্ষয়ে

কাজ ক’রে চ’লে যায় মৃত্তিকায়, মাঠভরা গোরুদের রোদে
চিলের ডানার থেকে ক্ষিপ্র এক ধূর্ততার মতো
জেব্রার মতো কোটে ছায়া ফেলে- তার পর ঘাসে
ছায়া-পরম্পরা যেন সব- পরস্পরের অনুগত।

এই সব নিয়ে সেই দূরের পৃথিবী
প্রান্তরের আসমুদ্র রোদের ভিতর
রয়েছে মৃত্যুর মতো আমাদের মনে।
সে-মানুষ মৃতের মতন অগোচর।

তার পর এক দিন- সারা-দিন বিষুবক্রান্তির এক ভোরে
ভোর ছেড়ে পুনরায় ঢের মাঠ- চিলের দুপুরে
একটি বৃহৎ দিন পেয়ে যাই- শেষ হবে না ক’;-
হয়তো-বা নীলিমার চুম্বনে যেতে পারে পুড়ে

আমি সেই কৃষাণের পিঠের রেখায় রৌদ্রে
সারা-দিন পায়ের পিছনে তার এক-রাশ বাতাসের দিকে চেয়ে থেকে
কোনও এক গ্রন্থ লিখে যাব মনে হয়
রূপান্তরিত এক মানুষের মতন বিবেকে।