মেসে

মেসে;
ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘এটা কী?’
‘চুনোমাছের তরকারি’
মাছগুলো কাঁচা-কাঁচা- একেবারেই কাঁচা- আঁশটে গন্ধ
চুনোমাছের তরকারি খেতে পারা যায় না- সরিয়ে রাখলাম এক দিকে
(তাকিয়ে দেখলাম) একরাশ ছোট-ছোট মাছ থালার এক পাশে প’ড়ে আছে।

অনেকগুলো মাছ
অনেকগুলো ছোট-ছোট মাছ
আঙিনার শিশুদের মনে করিয়ে দেয়
পাঠশালার ছোট-ছোট ছেলেদের মুখ মনে পড়ে
(অনেকগুলো ছোট-ছোট মাছ
প্রায় পঞ্চাশটা হবে না কি?)

কাল সকালেও এরা হয়তো দিঘির জলে ছিল
কিংবা নদীর জলে
ফাল্গুনের এই রোদ-রূপ-আকাঙ্ক্ষার ও আনন্দের ভিতর
কাল সকালেও ছিল এরা
শান্ত স্নিগ্ধ হিজল-পাকুড়ের ছায়া-আস্বাদ-মাখা দিঘির জলে হয়তো
পাড়াগাঁ’র পথে
পাশে আমের বন ছিল হয়তো
আসশ্যাওড়া বাঁশ চালতার জঙ্গল ছিল
ছিল স্নিগ্ধতা
শান্তি
স্বপ্ন
জলের অন্ধকার গন্ধের ভিতর পাতালের রূপ
এদের ভিতর কেউ হয়তো পিতা
কেউ মাতা
কেউ ভাই- বোন-
কে জানে সকলেই হয়তো এরা প্রণয়ী-প্রণয়িনী
জলের অন্ধকার গন্ধের ভিতর মাছের জগতের ধুম্র রহস্যের কথা কে জানে!

অনেকগুলো মাছ
অনেকগুলো ছোট-ছোট মাছ
(মাছগুলো কাঁচা-কাঁচা
মাছের আঁশটে গন্ধ গায়ে)
দিঘির ঘ্রাণ এখনও গায়ে লেগে রয়েছে
কলমি’র দাম- জল- ও কাদার ঘ্রাণ
ভালো ক’রে তাকিয়ে দেখ: কোনও অসৌন্দর্য খুঁজে পাবে না এদের শরীরে
কী জটিল বিচিত্রতা প্রতিটি শরীরে
যেন কোনও তন্ময় একাগ্রতা অনেক ক্ষণ নিবিষ্ট ছিল
প্রতিটি ছোট শরীরের জন্য
রুপার মতো চোখ, সোনার মতো চোখ
বাঁকা চাঁদের মতো- সন্ধ্যার শান্ত নদীর মতো নরম রেখা সব
গায়ে ময়ূরকণ্ঠীর আভা যেন
ধূসর মর্মরের আভাস
রূপকথার কুজ্ঝটিকা
প্রতিটি ছোট শরীরে
প্রতিটি মৃত শরীরে
কোন্ করুণ সৃষ্টিলোকের রহস্যের ভিতর থেকে এসেছে এরা!

মনে হয় এদের চেয়েও ঢের কাতর যেন সেই হৃদয়
যে এত করুণ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু কে সে?
কোনও আদিম মৎস্যপিতা?
জানি না!

অনেকগুলো মাছ
অনেকগুলো ছোট-ছোট মাছ
চুনোমাছের তরকারি করবার জন্য মেসের কড়াইয়ে এসেছিল এরা আজ
তরকারি সুবিধার হল না
তাই পাতের এক পাশে হিম হয়ে ছড়িয়ে প’ড়ে আছে।

ছোট্ট-ছোট্ট মাছ
পাড়াগাঁ’র পথে ছোট্ট-ছোট্ট মেয়েদের মতো
চড়িভাতির মাঠে- বটের তলায় এসে যেন জড়ো হয়েছে
হৃদয়, আজ এই কথাই মনে ক’রে নাও
অন্য কোনও গভীর- রক্তাক্ত- অন্ধকার কথা ভাবতেও যেও না।

জানো না কি এদের চেয়েও ঢের কাতর (যেন) সেই হৃদয়
যে এত করুণ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।