মেয়ে (সংযোজিত)

আমার এ-ছোট মেয়ে- সব-শেষ মেয়ে এই
শুয়ে আছে বিছানার পাশে-
শুয়ে থাকে- উঠে বসে- পাখির মতন কথা কয়
হামাগুড়ি দিয়ে ফেরে
মাঠে-মাঠে আকাশে-আকাশে।…

ভুলে যাই ওর কথা- আমার প্রথম মেয়ে সেই
মেঘ দিয়ে ভেসে আসে যেন
বলে এসে: ‘বাবা, তুমি ভালো আছো? ভালো আছো?- ভালোবাস?’
হাতখানা ধরি তার: ধোঁয়া শুধু
কাপড়ের মতো সাদা মুখখানা কেন!

‘ব্যথা পাও? কবে আমি ম’রে গেছি- আজও মনে কর?’
দুই হাত চুপে-চুপে নাড়ে তাই
আমার চোখের ‘পরে, আমার মুখের ‘পরে মৃত মেয়ে;
আমিও তাহার মুখে দু’ হাত বুলাই;
তবু তার মুখ নাই- চোখ চুল নাই।

তবু তারে চাই আমি- তারে শুধু- পৃথিবীতে আর কিছু নয়
রক্ত মাংস চোখ চুল- আমার সে-মেয়ে
আমার প্রথম মেয়ে- সেই পাখি- সাদা পাখি- তারে আমি চাই:
সে যেন বুঝিল সব- নতুন জীবন তাই পেয়ে
হঠাৎ দাঁড়াল কাছে সেই মৃত মেয়ে।

বলিল সে: ‘আমারে চেয়েছ, তাই ছোট বোনটিরে-
তোমার সে-ছোট- ছোট মেয়েটিরে এসেছি ঘাসের নীচে রেখে
সেখানে ছিলাম আমি অন্ধকারে এত দিন
ঘুমাতে ছিলাম আমি’- ভয় পেয়ে থেমে গেল মেয়ে,
বলিলাম: ‘আবার ঘুমাও গিয়ে-
ছোট বোনটিরে তুমি দিয়ে যাও ডেকে।’

ব্যথা পেল সেই প্রাণ- খানিক দাঁড়াল চুপে- তার পর ধোঁয়া
সব তার ধোঁয়া হয়ে খ’সে গেল ধীরে-ধীরে তাই,
সাদা চাদরের মতো বাতাসেরে জড়াল সে এক বার
কখন উঠেছে ডেকে দাঁড়কাক-
চেয়ে দেখি ছোট মেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে খেলে- আর কেউ নাই।