মহিলা

এইখানে শূন্যে অনুধাবনীয় পাহাড় উঠেছে
ভোরের ভিতর থেকে অন্য এক পৃথিবীর মতো;
এইখানে এসে প’ড়ে- থেমে গেলে- একটি নারীকে
কোথাও দেখেছি ব’লে স্বভাববশত

মনে হয়- কেননা এমন স্থান পাথরের ভারে কেটে তবু
প্রতিভাত হয়ে থাকে নিজের মতন লঘুভারে;
এইখানে সে দিনও সে হেঁটেছিল- আজও ঘুরে যায়;
এর চেয়ে বেশি ব্যাখ্যা কৃষ্ণদ্বৈপায়ন দিতে পারে;

অনিত্য নারীর রূপ বর্ণনায় যদিও সে কুটিল কলম
নিয়োজিত হয় নাই কোনও দিন- তবুও মহিলা
না ম’রে অমর যারা তাহাদের স্বর্গীয় কাপড়
কোঁচকায়ে পৃথিবীর মসৃণ গিলা

অন্তরঙ্গ ক’রে নিয়ে বানায়েছে নিজের শরীর।
চুলের ভিতরে উঁচু পাহাড়ের কুসুম বাতাস।
দিনগত পাপক্ষয় ভুলে গিয়ে হৃদয়ের দিন
ধারণ করেছে তার শরীরের ফাঁস।

চিতাবাঘ জন্মাবার আগে এই পাহাড়ে সে ছিল;
অজগর সাপিনীর মরণের পরে।
সহসা পাহাড় ব’লে মেঘ-খণ্ডকে
শূন্যের ভিতরে

ভুল হলে- প্রকৃতিস্থ হয়ে যেতে হয়;
(চোখ চেয়ে ভালো ক’রে তাকালেই হ’ত;)
কেননা কেবলই যুক্তি ভালোবেসে আমি
প্রমাণের অভাববশত
তাহাকে দেখি নি তবু আজও;
এক আচ্ছন্নতা খুলে শতাব্দী নিজের মুখের নির্থলতা
দেখাবার আগে নেমে ডুবে যায় দ্বিতীয় ব্যথায়;
আদার ব্যাপারী হয়ে এই সব জাহাজের কথা
না ভেবে মানুষ কাজ ক’রে যায় শুধু
ভয়াবহভাবে অনায়াসে।
কখনও সম্রাট শনি শেয়াল ও ভাঁড়
সে নারীর রাং দেখে হো-হো ক’রে হাসে।

দুই.
মহিলা তবুও নেমে আসে মনে হয়;
(বমারের কাজ সাঙ্গ হ’লে
নিজের এয়োরোড্রোমে- প্রান্তির মতো?)
আছে জেনেও জনতার কোলাহলে

তাহার মনের ভাব ঠিক কী রকম-
আপনারা স্থির ক’রে নিন;
মনে পড়ে, সেন রায় নওয়াজ কাপুর
আয়াঙ্গার আপ্তে পেরিন-

এমনই পদবী ছিল মেয়েটির কোনও একদিন;
আজ তবু উনিশশো বেয়াল্লিশ সাল;
সম্বর মৃগের বেড় জড়ায়েছে যখন পাহাড়ে
কখনও বিকেলবেলা বিরাট ময়াল,

অথবা যখন চিল শরতের ভোরে
নীলিমার আধপথে তুলে নিয়ে গেছে
রসুয়েকে ঠোনা দিয়ে অপরূপ চিতলের পেটি,-
সহসা তাকায়ে তারা উৎসারিত নারীকে দেখেছে;

এক পৃথিবীর মৃত্যু প্রায় হয়ে গেলে
অন্য-এক পৃথিবীর নাম
অনুভব ক’রে নিতে গিয়ে মহিলার
ক্রমেই জাগছে মনস্কাম;

ধূমাবতী মাতঙ্গী কমলা দশ-মহাবিদ্যা নিজেদের মুখ
দেখায়ে সমাপ্ত হ’লে সে তার নিজের ক্লান্ত পায়ের সঙ্কেতে
পৃথিবীকে জীবনের মতো পরিসর দিতে গিয়ে
যাদের প্রেমের তরে ছিল আড়ি পেতে

তাহারা বিশেষ কেউ কিছু নয়,-
এখনও প্রাণের হিতাহিত
না জেনে এগিয়ে যেতে চেয়ে তবু পিছু হটে গিয়ে
হেসে ওঠে গৌড়জনোচিত

গরম জলের কাপে ভবেনের চায়ের দোকানে;
উত্তেজিত হয়ে মনে করেছিল (কবিদের হাড়
যতদূর উদ্বোধিত হয়ে যেতে পারে-
যদিও অনেক কবি প্রেমিকের হাতে স্ফীত হয়ে গেছে রাঁঢ়):

‘উনিশশো বেয়াল্লিশ সালে এসে উনিশশো পঁচিশের জীব-
সেই নারী আপনার হংসীশ্বেত রিরংসার মতন কঠিন;
সে না হ’লে মহাকাল আমাদের রক্ত ছেঁকে নিয়ে
বার ক’রে নিত না কি জনসাধারণভাবে স্যাকারিন।

আমাদের প্রাণে যেই অসন্তোষ জেগে ওঠে, সেই স্থির করে;
পুনরায় বেদনায় আমাদের সব মুখ স্থূল হয়ে গেলে
গাধার সুদীর্ঘ কান সন্দেহের চোখে দেখে তবু
শকুনের শেয়ালের চেকনাই কান কেটে ফেলে।

নিরুক্ত। চৈত্র ১৩৪৯