মহলানবিশ

মহলানবিশ তার উঠিল ঘুমের ঘোর থেকে
যখন একটা রাত গির্জের ঘড়ি থেকে ঢং ক’রে বাজে
এমন কঠিন দিন- কত ক্ষণ ঘুম তার সাজে
জামাটা দুলিতে আছে দেয়ালের বিবর্ণ পেরেকে
আবার বলিল তারে ডেকে
এ-চীবর-ব্যাবসায় ঝুলে র’ব আমি কত দিন
পানওয়ালির মতো দোকান খুলিতে হবে রাস্তার মোড়ে
কিংবা আমি খৃস্টান পাদ্রি হব- কোনও এক করদাতা বুড়ো মহিলাকে বিয়ে ক’রে
অথবা আসাম’এ যাব- দু’-চারটে হাতি ধ’রে এনে
তবুও জীবনটাকে অত দূর নেবে তুমি মেনে
সব- সব- সব- সব- কুয়াশার কথাগুলো জেনে
অনেক স্বর্গীয় বই- অনেক জটিল বই প’ড়ে তবু-
কেউ-বা খালাসি হয়ে চ’লে যায়- অভিমানে- রেঙ্গুনের বিরাট জাহাজে
কেউ-বা পুরোনো দোকানে বই বিক্রি করে
জিঘাংসায় তৃপ্তি চায় সারা-দিন ট্রাম-চালকের মতো কাজে
রাজাগোপালাচারি’র কেঠো চশমাটা এখনও আসে নি এই দেশে
চশমা-জোড়ার কালো কাঁচের ভিতরে কী-যে ঢং
তাড়ি’র দোকান খুলে হে দূর মাদ্রাজি লঙ্কা,- এই শান্ত বাংলায় বসিব বরং
নাগার্জুনের মতো হেসে
তবুও বিদ্রুপ যেন চকচকে চশমার প্রফেসর হয়ে এক দাঁড়াবেই মাঝপথে এসে
এই প্রফেসরগুলো-
বিলেতের ফুক্কুরি অর্থনীতি ছেড়ে দিয়ে
স্যার জন ফলস্টাফ নিয়ে
বরং ঘামাত যদি আর-একটু মাথা
তসরের জামা আর অ্যাটাশে কেসটা দেখে মাঝপথে- তা হলে-
ভীষণ ভয় পেতে আর হত না বিধাতা-
(মুর্গির ডিমগুলো রাত দেড়টার এই অন্ধকারে যেন সাদা অবসর খুঁজে-
[পরিকীর্ণ পৃথিবীর অনন্ত ঝুড়ির থেকে উঠে-]
আমিও কি ঝুড়ি চাই- ধবল, বর্তুল মাথা তুলে তারা এক-আধ বার ধীরে গেল বুঝেসুঝে
সালানস্করের মতো আমি;- এক-রাশ স্ফটিকের বল যেন বিলিয়ার্ড টেবিলের-

গড়ায়ে-গড়ায়ে উড়ে যায়-
রোজ ভোরে কোটি-কোটি কেটলির বাষ্পে তারা তর্ক করে- ঘুরে-ঘুরে মূল প্রতিজ্ঞায়
জিনিসটা বুঝায়ে বলিতে চায় সমিতির নানাবিধ বচসার থেকে এক মীমাংসাকে
ভালো ক’রে ধ’রে নিয়ে মুঠে
গভীর বিষয়ী তারা কোনও দিন লাল ঝুঁটি নিয়ে বোকা কুঁকড়ো’র মতো আর
চায় না ক’ এক-চোখো গৃহস্থের জ্যোৎস্না ফুটফুটে-)
শহরের অবিরল মোটরের মতো দ্রুত গতির ভিতর
আগামী দিনের খাদ্য আছে ভেবে কারু-কারু রক্তে শুধু উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরিবার স্বর
নগরীর ফুটপাথ থেকে দূর ফুটপাথে
যতগুলো গ্যাসপোস্ট আছে আজও প্রদক্ষিণ চলিতেছে সারা-দিন তাহাদের সাথে
পকেটের ফুটো থেকে বাসি চানাচুরগুলো ঝ’রে গেছে কবে
তবু তারা দ্বিপদ জীবের হর্ষে আর-এক বার এই জীবনকে চিনে লয় ভোরবেলা
ওলন্দাজ নাবিকের মতন গৌরবে
অনেক নাবিক ম’রে হয়তো-বা একটি নাবিক বেঁচে র’বে
এল-ডোরেডো জয় ক’রে- চায়ের টেবিলে এসে বসিবে নতুন ভোরে
স্ত্রী আর সন্ততির পাশে
সে-সব টেবিলে ঢের কালো মাছি ম’রে যায়- মার্মালেড’এ- রূপকের মতন বিন্যাসে
কিংবা তারা ঝ’রে যায় চুর্ণ লোকবিশ্রুতির মতো নতুন আলোর দিকে চেয়ে
এই সব অনুভূতি- আমাদের- তোমাদের নয়-
বালিকার মতো এক দুরভিসন্ধির হাসি নিকটে দাঁড়ায়ে রয়
কানের মাকড়ি থেকে কানের মাকড়ি তক তাহার দুর্জ্ঞেয় হাসি
বিবর্ণ নষ্ট করে আমার হৃদয়।