মহোৎসব

এসো, আমরা উৎসব করি এইখানে- দুইটি শিশুকে
এসো, অভ্যর্থনা ক’রে যাই তার পর- যারা- মূঢ় উদাসীন
পৃথিবীকে আবার গড়িতে চায় তুষের ছায়ার থেকে ফুলে
শিশুর মতন তারা- যদিও অনেক বড়ো হৈমন্তিক রাত্রির চাঁদ
তাদের মাথার ‘পরে ঢের আয়ু ঢেলে গেছে- তাদের নাকের ডাঁসা
ভেঙে গেছে- চোয়ালের মাংস ক্রমে ক্ষীণ হতে হয়ে গেছে আরও ক্ষীণ
আমাদের মনে হয় এই দু’টি মহিলা- তবুও শিশু-

কিন্তু তার আগে দেখ এইখানে বিকেলের আলো
যেন এই অমেয় প্রান্তরে কোনও সমুদ্র এখুনি ছিল- চোখের পলকে
গিয়েছে প্রান্তর হয়ে- মহিমার প্রয়োজনে- যেন এই শতাব্দীকে দূরে
সচ্ছল তর্কের হাতে ক্রমাগত চ’লে যেতে দেখে
বিক্ষুব্ধ সময় এসে জন্ম দিয়ে চ’লে যায় এক-আধ বার
প্রশান্ত অদূরবর্তী আকাশের হরিয়াল-পালকের মতো মৃদু মেঘে
পশ্চিমের সূর্যকে;- যুগ ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে এলে মানুষের চোখ
ধূর্ত ভীত বেজি’র মতন;- নড়ে পায়রা’র সাদা গোল ডিমে
জ্যোতির প্রতীক দেখে- সমুদ্র, প্রান্তর, সূর্য অবহেলা ক’রে
তবুও বিকেল আসে পৃথিবীতে আপনার শব্দহীন সংক্রামণ নিয়ে
মাঠের নির্জন ঢিল প্রাণ পায়- শোনা যায় পৃথিবীর
আহ্নিক গতির আবেগ, রোল- উঁচু-উঁচু গাছদের দীর্ঘতর ছায়া
রৌদ্রের ভিতরে এক লুক্কায়িত রৌদ্রকে অনুভব ক’রে
দার্শনিকদের চেয়ে আরও স্থির প্রতিভায়
এমন আভার মুখে এসে পড়ে কুকুরের মুখ, কালো জন্তুর কপাল
কীটের নির্মোক, খড়, টিল- ত্যক্ত পাখিদের নীড়
যাহারা মাটির গর্ভে বায়ু নয় আজ আর, এখনও কপিশ প্যারাফিন
হয় নাই- কঙ্কালের চাপা ঠোঁট নিয়ে শক্ত আয়ুর সময়
গুণে যায় অবিকল- আমাদেরও হৃদয়ের মানবিক ভয়
নীরব শুদ্ধতা পায়- আকাশের চেয়ে আরও বড়ো এক, স্থির
অন্তঃসার প’ড়ে থাকে আমাদের সকলের সাধারণ হাতে
ব্যবহৃত হতে চেয়ে।
দুইটি সুন্দর জন্তু তবু এই বিকেলের আলোর প্রদেশে
যেন দিকহস্তীদের অগোচর অন্ধকার ষড়যন্ত্র থেকে
উঠে এল; সারসের স্মরণীয় রৌদ্রের ভিতর দিয়ে তারা
চ’লে যায়- তবুও পাখিকে, তার রৌদ্রকে স্পর্শ করে না ক’
আমাদের সময়ের ঘড়িহীন এই স্থির মণিবন্ধ, রুধির, হৃদয়
মেরুসমুদ্রের মতো- আকাশে কোথাও সূর্য রয়ে গেছে ভুলে
সূর্যের ছবিকে নিয়ে তৃপ্ত হয়ে শুধু।
এই দু’টি মহিলার ছবি স’রে যায়।
ইহাদের চিনি আমি। ইহারা পলিটিকাল। মিনারের মেঘে
শৈশবে লালিত হয়ে এরা তবু শীর্ণ নর্দামার থেকে জল
পান ক’রে চ’লে গেছে- বিহিত বিজন চোখে-
অমায়িক পাখির মতন
হৃদয়কে জুড়োবার প্রয়োজনে হৃদয়ের চেয়ে আরও বেশি ক’রে।

যেন সেই উপকাহিনির স্নিগ্ধ কৃকলাস-আত্মার মতন
মানুষের রক্তাক্ত হৃদয়; রিরংসার মতো লাল গোলাকার সম্পূর্ণ আগুনে
ক্রীড়া তার; আমিও আঙুল তুলে বৃত্ত যদি কেটে ফেলি মলিন বাতাসে
বিবর্ণ দেয়াল থেকে উঠে তবে কোনও এক দূরদর্শী দিন
করতালি দিয়ে হেসে গুম্ফায় শায়িত কোনও সম্রাটের নীল সাটিনের
জামার ভিতর থেকে সূচিশিল্প খুলে যাবে ফাঁকি দিয়ে সময়ঘড়িকে
আবার সে বুনে যাবে মহীয়ান সূচিশিল্প সময়ঘড়িকে ফাঁকি দিয়ে
এই তার বড়ো ক্রীড়া। মায়াবী সে। আমি কবি। তোমরাও শিশু
আমাদের সকলের মহোৎসব আমাদের সচকিত অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে।