মনবিহঙ্গম

ঢের যুগ নিষ্ফল হয়েছে;
এরকম কেবলই কি হবে?
ইতিহাস কেবলই কি অন্ধ পরীক্ষার
অন্ধকারের অনুভবে?
আশার সঞ্চারে সূর্য আলো,
আকাশের পারাপার নীল।
হ’লেও অজ্ঞান নিয়মের
চাকায় কি ঘুরছে নিখিল?

শাদা আর কালো রঙে মাখা পৃথিবীর
কোলে আজ মানুষের স্থান
পুড়ে কি ছাইয়ের মতো কালিমা হয়েছে?
কোথায় প্রাণের বৃক্ষ তবু, আহা, মরুকল্যাণ?
ধূসরতা স্নিগ্ধ করে জল?
সময় ও সময়ের আত্মা চাতক
সূর্যের অনলে বাষ্পে ক্ষয়
পেলে কি অমিয় হবে অগ্নিবলয়।

কারা কবে কথা বলেছিলো,
ভালোবেসে এসেছিলো কাছে;
তারা নেই, তাদের প্রতীক হ’য়ে
তবু কয়েকটি পুরোনো গাছ আছে;
নক্ষত্রেরা র’য়ে গেছে নদীর ওপরে;
চারিদিকে প্রান্তর ও ঘাস,
দু-চারটে ঘর বাড়ি নীল ও শিশির,
কূলে-কুলে একলা আকাশ।
যারা ছিলো তারা কেউ নেই;
জীবন তবুও এক শান্ত বিপ্লবী,
স্থির আগুনের মতো অবিরল আলোক দিতেছে;
সে-আগুনে আলো ছাড়া দহে যায় সবি।

নিশ্চিত মৃত্যুর শূন্য আঁধারের আগে
হে নিঃসঙ্গ বৃক্ষে মনবিহঙ্গম তুমি,
দেখেছিলে জেনেছিলে ভালোবেসেছিলে
দ্রুত পরিবর্তনের মতো পটভূমি
পৃথিবীতে মানুষের আসাযাওয়া তবু;
শীগগিরই এ-মাটির নিজের স্বভাবে
মিশে সব লোভপ্রেমযুক্তিহীন ধুলো হ’য়ে যাবে
প্রকৃতির কতো শত অনন্ত অমিয়ে।

[পূর্বাশা। আশ্বিন ১৩৫৯]