মনে হয় কত দূর তুমি

‘মনে হয় কত দূর তুমি চ’লে গেছ যেন- ‘ বললে সে- ‘কত দূর আমি
স’রে গেছি; আর অই নক্ষত্রেরা ঢের দূর চ’লে গেছে- ‘ আমরা দু’ জনে ক্রমে ঢালু মাঠে নামি
দু’ জনের হাত ধ’রে দাঁড়ালাম,- হাত তার রক্ত-মাংসে গড়া পৃথিবীর
নয় আর: ঠোঁট মুখ চোখ চুল- সমস্ত শরীর
মনে হল যেন কোন অদৃশ্য নক্ষত্র নিয়ে খেলা করে অপার্থিব সোনালি জরির।

‘আজ রাতে- আজ ভোরে কবেকার সে-ভূমিকা স’রে গেছে- জানি
মনে হয় তুমি যেন হারিয়ে গিয়েছ এই পৃথিবীতে- তোমার শরীরী মুখখানি
বাসনার পরিণতি ভুলে গেছে- প্রেমকে সে ফেলে গেছে কাঁটা-কাঁকরের পথে ভিখিরির মতো
এ তার স্বভাব নয়; যা হয় তা স্বভাববশত
হয় হয়তো- ‘ ধীরে-ধীরে ব’লে আমি থামলাম,-
তবু তার শান্ত চোখ, হিম হাত, স্নিগ্ধ ভুরু- মুখে তার কোনও উচ্ছলতা
নেই আজ; ধীরে-ধীরে হাঁটছি দু’ জনে মাঠে- হেঁটে চলি আরও দূরে- আমাদের কথা
অতীত জগতে এক মুছে গেছে; যেই যুগ্ম হরিয়াল উড়ে যায় কামনায় সন্ধ্যার বাতাসে
তাদের ডানার গন্ধে অন্ধকারে আমাদের কথা আজও ব্যথা হয়ে ভাসে
অনেক আবছা পাতা ঝ’রে পড়ে ঘুরে-ঘুরে পাতার ওপর
যাদের হলুদ বুক নিবিড় সহজ ছিল- সেই সব এলোমেলো খড়
ছড়িয়ে রয়েছে মাঠে হিম ছিন্ন- এক দিন ধানের মতন গন্ধ ধরেছিল বুকে
আমাদের মৃত প্রেম আজ রাতে ধীরে-ধীরে এই সব মৃতের সম্মুখে
কুয়াশায় শুয়ে আছে; কেন, আ-হা? শুধালাম- নক্ষত্রেরা দিল না উত্তর
ভূমিষ্ঠ হবার আগে কিংবা এই উৎসাহিত পৃথিবীতে মৃত্যুর পর।