মনে ভাবি

মনে ভাবি- হয়তো-বা আমাদের প্রাণে
নির্জন গোলাপ আছে- সময়ের অবলেপহীন
অনেক ধূসর যুগ পাড়ি দিয়ে এসেছে সে- এসেছে কে?
বাগানের দেয়ালের ঐ পারে কাঁচি-হাতে দাঁড়ায়ে রয়েছে সমীচীন-

‘ওঁ মণিপদ্মে হুম’ ব’লে জীবনের পুরজ্যেষ্ঠ- অনবদমিত পুরোহিত
অনেক সঙ্গত যুদ্ধ- বরণীয় মীমাংসার পর
নিশীথের বিছানায় চুম্বন কিনিতে গিয়ে
চেয়ে দেখে প’ড়ে আছে শ্মশ্রুমান শ্বেতাশ্বতর।

সময় যেতেছে উড়ে- সময় যেতেছে উড়ে
তিন্তিড়ির পল্লবের ফাঁকে-ফাঁকে জটিল অনেক ধাঁধা- অবচ্ছায়া ঢের
শিশু-চাঁদ তবু সেই সমস্যার সুতো কেটে চ’লে যায়
ঘড়িটাও ম’রে গিয়ে ব্যূহ ভেদ ক’রে যায় কাঁচ আর নিকেল ফ্রেমের

সময় যেতেছে উড়ে- সময় যেতেছে উড়ে- সাধাে তো হেঁয়ালি এই:
মনে হয় আকাশের নীল তাসে সব
সার্কাসের শ্রাদ্ধের শামিয়ানা হয়ে গেল
নক্ষত্রেরা হয়ে গেল গুলি-খাওয়া চীনেহাঁসদের কলরব।

অনেক নিশান্ত ভ’রে অনেক গভীর বই পড়া যাবে, প্রিয়
অনেক দিবস ভ’রে বহুতর মহনীয় মানবিক কাজে-
বলিতেই পলিমাটি সূচনার তটিনীকে গিলে খায়
বিষয়ীর হিম বলিরেখা এনে বাসরের সখীদের মাঝে

যৌবনকে লক্ষ্যহীন যাত্রার জটায়ুর রূপ দেয়- চেয়ে দেখ তুমি
রুধির নিঃসঙ্গ, ম্লান, বাক্যহীন- প’ড়ে আছে প্রবীণ প্রতিভা
চুম্বন কি আলিঙ্গন চেয়েছিল?- আরও চেয়েছিল ঢের- আরও ঢের
ঐ দিকে স্বর্ণপুরী লঙ্কাও তাড়াতাড়ি নিভায়ে ফেলিল তার দিবা।

নিমন্ত্রণে সন্তদের উজ্জ্বল আলোয় ব’সে খেতে-খেতে মনে হয় চুপে
হয়তো বিয়ের বাড়ি? হয়তো বুড়োর শ্রাদ্ধ? সেই যুবা সাদা হয়ে ম’রে গেল কবে
এতগুলো বছর সে কী করেছে?- আমরাও কী করেছি, আহা?
আমাদের সন্তানেরা- আমাদের সন্ততিরা কোন বৃত্তে ঘুরিছে নীরবে।


মানুষীর- হরিণীর- নয়নে কি নদী আছে?- দীক্ষিতেরা জানে
নগরীর পরিক্লান্ত বাথরুমে আছে আরও গাঢ়তর নদীর মুকুর
সেইখানে মৃত গার্হস্থ্যের ভিড়ে দুই কাঠা ভিটার উপরে
ঘুঘুর-ঘুঘুর-ঘুর- করিতেছে খানিকটা অ্যানাটমি যেন এক আলেয়া-ঘুঘুর।


‘পরমহংস’র ছবি নিন নিন-‘ ব’লে যেন পাখিনির মতো তার নীড়ের নিকট
বেকার কী গ্রাজুয়েট যুবকেরা উচ্ছ্বসিছে- জানে না যে আমি মূর্খ, আমি এক চিল
মুমুক্ষায় মন নাই; ফুটপাথে কুষ্ঠরুগি কার জীর্ণ গেঞ্জি-ক্যাপ এঁটে
আর-একটি প্রভাতের বায়ু খায়, পথের গণিকা রেস-টিপ্ কেনে, কুড়ায় রঙিন হ্যান্ডবিল।

অই কুমারীর নীল সুইমিং-কস্ট্যুম গোলদিঘি জুড়ে যেন ময়নার ডানা
বুড়ি হাড়গিলা ব’লে তবু তার পরিচয়- সব ক্যাম্প ছেড়ে ঢের দূরে
সব সিন্ধু হয়ে গেল বাগানবাড়ির পাশে তিন গজ ধােপার-পুকুর
সারা-রাত ডাস্টবিনে ব’সে আছে মরা শিশু: বুদ্ধের মতন যেন মলয়ালমের জাদুঘরে।

আর-একটি প্রভাতের অনাবিল বায়ু আসে অবিরাম আলোর সাগরে
মানুষের শত্রু তবু ম’রে নাই- হয়ে আছে সমুজ্জ্বল খিচুড়ির-দানা
ক্রূরদের প্রাণে শুধু ধূমিতেছে চার্বাক-শোপেনহাওয়ের: সার্বিক ঐতরেয় যূথ
তবু দেখ ভালোবাসা- যা না শিখে খেলিতেছে কত রাতকানা।