মনোসরণি

মনে হয় সমাবৃত হ’য়ে আছি কোনও এক অন্ধকার ঘরে
দেয়ালের কার্নিশে মক্ষিকারা স্থির ভাবে জানে:
এই সব মানুষেরা নিশ্চয়তা হারায়েছে নক্ষত্রের দোষে;
পাঁচ ফুট জমিনের শিষ্টতায় মাথা পেতে রেখেছে আপোষে।

হয়তো জেঙ্গিস আজও বাহিরে ঘুরিতে আছে
করুণ রক্তের অভিযানে।
বহু উপদেশ দিয়ে চ’লে গেলে কনফুশিয়াস-
লবেজান হাওয়া এসে গাঁথুনির ইঁট সব ক’রে ফেলে ফাঁস।

বাতাসে ধর্মের কল ন’ড়ে ওঠে- ন’ড়ে চলে ধীরে।
সূর্যসাগরতীরে মানুষের তীক্ষ্ণ ইতিহাসে
কত কৃষ্ণ জননীর মৃত্যু হ’ল রক্তে- উপেক্ষায়;
বুকের সন্তান তবু নবীন সংকল্পে আজও আসে।

সূর্যের সোনালি রশ্মি, বোলতার স্ফটিক পাখনা,
মরুভূর দেশে যেই তৃণগুচ্ছ বালির ভিতরে
আমাদের তামাশার প্রগলভতা হেঁট শিরে মেনে নিয়ে চুপে
তবু দুই দণ্ড এই মৃত্তিকার আড়ম্বর অনুভব করে,

যে-সারসদম্পতির চোখে তীক্ষ্ণ ইস্পাতের মতো নদী এসে
ক্ষণস্থায়ী প্রতিবিম্বে- হয়তো-বা
ফেলেছিল সৃষ্টির আগাগোড়া শপথ হারিয়ে,
যে-বাতাস সারা-দিন খেলা করে অরণ্যের রঙে,

যে-বনানী সুর পায়-
আর যারা মানবিক ভিত্তি গ’ড়ে- ভেঙ্গে গেল বার-বার
হয়তো-বা প্রতিভার প্রকম্পনে,- ভুল ক’রে- বধ ক’রে- প্রেমে;-
সূর্যের স্ফটিক আলো স্তিমিত হবার আগে- সৃষ্টির পারে

সেই সব বীজ আজও জন্ম পায় মৃত্তিকা অঙ্গারে।
পৃথিবীকে ধাত্রীবিদ্যা শিখায়েছে যারা বহু দিন
সেই সব আদি অ্যামিবারা আজ পরিহাসে হয়েছে বিলীন
সূর্যসাগরতীরে তবুও জননী ব’লে সন্ততিরা চিনে নেবে কারে।

আনন্দবাজার পত্রিকা। শারদীয় ১৩৪৬