মরা জ্যোৎস্নায়

এক-আধ বার আমি ভেবে গেছি- অনিচ্ছায়
সমুদ্রের বালি আর আকাশের তারা
আমার বিষয় নয়- যৌবন, স্থবির, শিশু, ভূত
আমার একটি বইয়ে দিয়ে যাবে সাড়া

হৃদয় জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একাকী রয়েছে
মাখন-রেণুর সাথে ঝ’রে গেছে নিশি-প্রজাপতিদের শব।
তুমিও তো, হে সময়, সিংহ আর শশকের মাঝখানে কিছু
কেন তবে রয়েছ নীরব

হয়তো বরাহ আজ অবতার নয়
তবুও পৃথক নয় আজ আর পৃথিবী আকাশ
একাকার হয়ে সব মিশে গেছে সম্রাট, গণিকা, ভাঁড়
শূকর, অধ্যক্ষ, ক্রীতদাস।

আমিই সম্রাট তবে- তবুও শূকর
অধ্যাপক- তবু আমি ভাঁড়
সমুজ্জ্বল সূর্যে জলে- বণিকের করতালি সাথে
তিন ফুটে মেঘকন্যাদের হাহাকার।

তা হলে স্তব্ধতা আর অবসর চাই আমি
কোনও এক প্রাসাদের গম্বুজের কাছে?
যেই শান্তি পরাৎপর নক্ষত্রের ঘূর্ণনে নাই
কোথায় তা আছে?

কেবল একটি বই দেব আমি সকলকে
গোল টেবিলের পাশে নীলাভ ঢাকনি এঁটে দিয়ে
নির্জন বাতির ‘পরে- পৃথিবীর জীবন্মৃত্যু থেকে দূরে স’রে
আপনার বীজ থেকে নিজেকে হারিয়ে?

কবির উন্মীল দান স্তব্ধতার ভ্রূণে গ’ড়ে ওঠে
বিষণ্ন শান্তির থেকে জন্ম লয় তার অবসর,
সক্রিয়তা;- তবু এক নীরবতা র’য়ে গেছে কলম, চেয়ার, বেঞ্চি, গদি আর বারে
প্রসাদে স্থবির হয়ে মনে করে নিজেকে অমর।

ঢিলে পায়জামা তার লাঙ্গুলকে গোপনীয় ভাবে রাখে ঢেকে
কুক্ষির নিকটে তবু ন’ড়ে যায় ধীরে-ধীরে লাঙ্গুলের প্রেত
সবার রাত্রির নিচে অন্ধকারে নগরীর ঘণ্টা বেজে গেলে নগরীর বিষে
গণিকাও চায় সেই অমরের অকৃত্রিম শব-ব্যবচ্ছেদ।

সচেতন আলো নিয়ে সকলের রক্তের ভিতরে
প্রবেশের স্থির পথ যদিও কম্পাসে কাঁটা নড়ে
যেই নির্জনতা এক রয়ে গেছে নক্ষত্র, নেউল, ক্রীতদাস
বাঁধা ব’লে লাঙ্গুলের মতন নিগড়ে

সেই লোল নীরবতা অনুভব ক’রে নিয়ে কবি
শ্মশানের পারে সাদা গোধূম-খেতের মৌলি পায়
কঙ্কালের ক্বাথ থেকে ফুলের সুগন্ধে জেগে উঠে
পেঁচা আর ইঁদুরের দাঁতে-কাটা মরা জ্যোৎস্নায়।