মস্তিষ্কে কল্পনাশিখা জ্বলে
জীবনের ব্যাং এক অভিজ্ঞতা তৈল তার-
কখনও ভাঁড়ের মতো অনেক প্রগলভ কথা বলে
আমার হৃদয় তাহা আধাে-ভালোবাসে
তবুও অগ্রাহ্য হয়ে জ’মে থাকে সেই সব মূঢ় গল্প
আমার কঙ্কালে চুনে স্নায়বিকতায়
মরণের পরে অগ্নি মানুষের যেইটুকু নশ্বরতা পায়
বিংশ শতাব্দীর এই তৃতীয় দশকে
এখন পৃথিবী অস্থির
শিল্পী তবুও এক সুস্থিরতা চায়
সেই কুরুবর্ষ থেকে আজ এই রুষ্ট উপসাগরের দেশে
অনেক অদ্ভুত পাখি বেঁধে গেছে নীড়
বিশ্রুত সোনালি সিংহ নেড়েছে কেশর
আজ আমি চাই যদি-
আমার শেলফে এসে তাহারা সাজিতে পারে ক্যারেরা পাথর
বধির রোমক মূর্তি- সূর্যের জ্বলন্ত রৌদ্রে সব
এই শান্তি নিয়ে তবু দুর্দিনের রৌরবে
সৌন্দর্যের অবতারও রয় কি নীরব
২
এখন নামিতে হবে প্রশান্তির স্থান ছেড়ে দিয়ে
সে-ও ভালো;- কোনও স্থানই ভালো
পাই-টেপা চর্চার সিংহাসন ছাড়া
যখন অনেকে পরে বিচিত্র কাঁথার শিল্পে লেলিহান জুতা
তাদের পায়ের নিচে বৃশ্চিক- কর্কট
ছুতোর কামার মিস্ত্রি গোলকধাঁধার গর্ভে
যখন পায় না খুঁজে
কোনও এক লোকোত্তর প্রেমিকার ববিনের সূতা
যখন মাঝিকে আর ঘুমাতে দেখে না কেউ
বৈতরণী তরঙ্গের জলে
একটি কবাট খুলে বোবা ও বধির সব মন
চেয়ে দেখে পৃথিবী- নক্ষত্র- পাখি- নীল কোলাহল।
৩
এক-একটি মানুষকে দেখা যায়
ঘুরোনো সিঁড়িতে চ’ড়ে ক’রে যায় আয়ু-রোমন্থন
সাড়া পেয়ে নেমে আসে হুদ্দার ভিতরে
নীল চশমার পিছে তার চোখ
ঘর্মাক্ত সূর্যের নিচে লক্ষ মুমূর্ষুর মাল ক’রে যায় ক্রোক
সকল কুলুঙ্গি জুড়ে ধামা-পেটে বসেছে গণেশ
তাহার ধীমত্তা তবু ইঁদুরকে চায়
মহাভারতের যেই ব্যাসকূট- সে-সবের মানে
এই সব ব্যস্ত ইদুরেরা জানে গভীর অজ্ঞানে
অনেক অদ্ভুত চাল খেয়ে ফেলে যখন হয়েছে কায়ক্লেশ
কান পেতে শোনা যায় গৈবি সমস্বর
চলন্তিকা চলিতেছে- কে রে সেই? পার্থসারথি
অযুত কঙ্কালসার সুবিধার স্বাদ পেয়ে জিভ খুলে কাশে
তার পর সদ্য মরা মুখ নিয়ে কুকুর খেপায়ে তারা হাসে
মৃতদার ম’রে গেলে টের পায় জীবনের জাহ্নবী রগড়
৪
সময় কাটে না ঢের মানুষের- খনিগর্ভা পৃথিবী এখনও
দেয় নি উজাড় ক’রে শেষ তেল, কয়লা ও সোনা
সময় কাটে না আরও ঢের মানুষের
আশ্চর্য বিদ্যুৎঘোড়া ব’লে যায়: জন্ম যদি দেই আমি বুনো খচ্চরের
এসো, কুঁড়ে গরু- হো-হো- তোমাকেই কেন-বা দেব না!
এ-সব সংঘাত তবু পাচনের মতো নয়, মধু’র মতন
খানিকটা আত্মবিশ্বাসের বলে যা-হোক রাজপথে চ’লে
যেখানে মহালে ঢের সাধু সিংহ অর্থনীতি বুঝে গেছে ব’লে
অসংখ্য ভেড়া’র পাল পুষিতেছে- তৈমুরকে টিটকারি দিয়ে:
জীবন্ত জীবের মুণ্ডে হয় যে রে ধনোৎপাদন।
৫
তখন আমার তরে দুর্বোধ্য- উদ্ভট
ধবল বকের রাশি। সারসের গান নিয়ে নীলিমা বরুণ
হয়তো-বা আবিষ্কার- ব্যবহার নয়
নীলাভ, হলুদ, শান্ত বর্ণ নিয়ে নক্ষত্রের দেশ
দূরবিনে ধরা দিয়ে স্বৈরী প্রেমিকের মতো ক’রে যায় শ্লেষ
নগ্ন চোখের কাছে এত দিন যা শিখেছি- বিশ্বপরিচয়
আমাদের মনে যদি থেকে থাকে কোথাও ককুদ
তুঙ্গ আরও ক’রে নিতে হবে সেই মেধপ্রতিভাকে
আমাদের চিন্তা ঘিরে কৰ্ষণ করিতে হবে সজারুর কাঁটা
অযুত বছর হেঁটে আমরা নেমেছি এসে লোকশিক্ষায়
উন্মীল জঙ্গল হর্ষে আমাদের ডাকে।