মৃত্যুকে চেন না?

শুনলাম আজ আর-এক জন ম’রে গিয়েছে
এই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কয়েক জন সাহিত্যিক, কবি, দার্শনিক ও যোদ্ধার মৃত্যু-সংবাদ পেলাম
এই কয়েক সপ্তাহ ধ’রেই মৃত্যুর বিস্ময় আমার মাথার ভিতর সঞ্চারিত হচ্ছে

এদের এক-এক জন এক সময়ে পৃথিবীর এক-একটা বিরাট খণ্ডের আশা ও আশ্বাসের স্তম্ভের মতো ছিল
তার পর প্রাণে বেঁচে থেকেও হয়ে রইল তারা মৃত্তিকার স্তম্ভের মতো

আজ সেই মাটির স্তূপও ঝ’রে পড়ল-
কাল হবে তারা বিস্মৃত: যেন কোনও দিন এ-পৃথিবীতে তারা বর্তমানও ছিল না
(তাদের জন্মও যেন হয় নি কোনও দিন এ-পৃথিবীতে-তাদের মৃত্যুও যেন হয় নি কোনও দিন)
কাল ভোরের সোনালি রৌদ্রে পেয়ারার শাখা দুলবে, মাছরাঙা উড়বে
কাল নক্ষত্রের আলোয় বালিকা সাদা পাথরের রেকাবিতে আতার ক্ষীর নিয়ে আসবে তার প্রিয়ের জন্য
সুন্দরীর ছায়ায় চিতাবাঘ বাঘিনীর সঙ্গে জ্যোৎস্নায় খেলা করবে
পৃথিবীর বিপুল উদ্যম ও অকুতোভয়তা শুরু করবে সমুদ্রের কলরব আবার
যে হৃদয় সাহস ও স্বপ্ন এক দিন পৃথিবীকে আনন্দ দিতে পেরেছে ব’লে নতুন নেই আর
(ব্যবহৃত স্থাবর পাণ্ডুলিপি হয়ে গেছে)
তাদের সুষুপ্তির উপর ধুলো জমবে শুধু
অকাতরে ধুলো জমবে…

আজ নতুন কবিতা লিখতে গিয়ে মৃত্যুর এই নিঃশব্দ বিস্ময়ের কথা ভাবি আমি
কেন কাজ করি? কথা বলি? লিখি? স্বপ্ন দেখি?
মৃত্যুর ধুলোয় ধূসরিত সমস্ত অতীত আমার প্রতিটি নতুন অক্ষরকে প্রতিবাদ ক’রে মুছে ফেলতে চায়
বলে, “তুমি চোখের পলক না ফেলতেই এ গভীরতম নিঃসঙ্গ বিস্মৃত জিনিস হয়ে যাবে;
মৃত্যুকে চেন না?”