নিজের পাখার হিমে কেঁপে

নিজের পাখার হিমে কেঁপে উঠে- পাখির মতন
জীবন উড়িতে আছে অন্ধকার আকাশের তলে
তাহার চোখের ছায়া শীতের নদীর ধীর জলে
অস্থির ইচ্ছার মতো তুলিতেছে শুধু আলোড়ন
ঘুমন্ত বনের পারে অন্ধকারে ঘুমায়েছে তবু ওই নদীও তেমন
জীবন চলিছে তবু- অধীর জোনাকি শুধু চলে
তার সাথে- হেমন্তের মতো হিম পাখাটির তলে
আলো জ্বলে তাহাদের, নিভে যায় আলো
কোন্ দূরে- কোথায় হারালো
শীত নদী- কোথায় হারালো
শীত নদী- কেন মৃত জোনাকিরা প’ড়ে আছে পিছে
পাখার ছায়ার মতো মৃত্যু এসে পাখিরে খুঁজিছে
নদী বন অন্ধকারে হতেছে ধারালো

ঘুমায় নি নদী তবু,- ঘুমায় নি অন্ধকার বন
ঘুমন্ত দৈত্যের মতো পড়ো নি ঘুমায়ে
হে পাহাড়,- সাপের মতন পথ এলোমেলো পাহাড়ের গায়ে
তোমরা ছড়ায়ে আছো হৃদয়ের স্বপ্নের মতন
অনেক আকাঙ্ক্ষা ল’য়ে তোমাদের মন
অন্ধকারে স্তব্ধ হ’য়ে আছে
তোমাদের মতো আমি তোমাদের কাছে
আসিয়াছি- তোমাদের পাশে
ছায়া ফেলে- আমার ডানার থেকে ঝরে
শিশির- হিমের গন্ধ পৃথিবীর ‘পরে
আমারে সবার চেয়ে মৃত্যু ভালোবাসে!

নিরাশা আমারে বাসে সব-চেয়ে ভালো
ব্যথা- বিদ্যুতের মতো চুমো খায় এসে
আমার বুকের ‘পরে স্থান ভালোবেসে
আমার বুকের ‘পরে কেবল ফুরালো
সোনার মতন মেঘ আনে যেই আলো
ভোরবেলা কোনও দূর মাঠের উপরে
কিংবা কোনও সমুদ্রের তরে
সীসার মতন পথ- পৃথিবীর শেষে
আকাশের আঁধারের আঘাত ফুরালে
ভোর এসে যেই আলো জ্বালে
প্রিয়ার মতন ভালোবেসে!

কেন আমি আসিয়াছি পৃথিবীর ‘পরে
ইচ্ছার নদীর ঢেউ কেন আমি তুলি
ভেঙে যায় ডুবে যায় ঢেউ- ঢেউগুলি
হতাশার কোলে ব’সে তবু অপেক্ষারে
ভালোবাসি- আঁধার রাতের মতো জেগে থাকি গহ্বরের ধারে
হৃদয়ের গুহার উপর
আসিতেছে- তুলিতেছে স্বর
স্বপন ঢেউয়ের মতো নেমে
নিরাশার মতো নেমে
হৃদয়ের ভাঙনের- ফাটলের মাঝে
যাবে কি তা কোনও দিন থেমে!

শীতের নদীর জলে চকিত পাতারা
কেঁপে-কেঁপে চুমো খেয়ে ঘুমায় যেমন
হৃদয় কাঁপিতে আছে তাহাদের মতন তেমন
সে কাহারে চুমো দেবে- নদীর ঢেউয়ের মতো কারা
তাহারে তুলিয়া ল’বে- কেঁপে-কেঁপে পায় না সে তাহাদের সাড়া
ভূতের মতন ছায়া ফেলে
কোন্ পথে গেলে তুমি- কারে তুমি পেলে
পৃথিবীতে আকাশের ‘পরে
কোন্ অপরের বুক
কোন্ কবরের মুখ
তোমারে টানিয়া ল’বে বুকের ভিতরে!

মেঘের গুহার পথে নেমে আসে নিভে যায় বিদ্যুৎ যেমন,
পৃথিবীরে এক বার দিয়ে যায় দেখা
তার পর অন্ধকার প’ড়ে থাকে একা
তেমন আহত হ’য়ে প’ড়ে আছে মন
বিদ্যুতের তরে কালো আকাশের ক্ষুধার মতন
জেগে আছে- বুক তার খুঁজে নিতে আসে
আকাশের পিছনে আকাশে
গহ্বরের মতন শূন্যতা
তবুও পড়িয়া থাকে- শীত-অন্ধকার
ঢেকে ফেলে সমুদ্র-পাহাড়
তারার হৃদয়ে তার লাগে আড়ষ্টতা

কেঁদে ওঠে পাহাড়ের পাইনের বন
এক বার- বার-বার যেমন আঁধারে
সারা-রাত সে-কাঁদন কে থামাতে পারে!
কে মুছে ফেলিতে পারে এই অন্ধ রাতেরে এমন!
শীতার্ত শাখার মতো পাইনের কেঁদে ওঠে মন
দিকে-দিকে ঝ’রে পড়ে হৃদয়ের পাতা
শিকড় ছিঁড়িয়া যায়- মৃতের মতন তবু মাথা
নিস্তব্ধে ঘুমায় কই পৃথিবীর ‘পরে
বাতাস বানের মতো বিঁধিতেছে তারে
অন্ধকার নেমে আসে আরও অন্ধকারে
সে একা জাগিয়া আছে নক্ষত্রের তরে!

জেগে আছে নদী বন সমুদ্র আকাশ
হাত ধ’রে অপেক্ষায় আছে পরস্পর
কোন্ স্বপ্ন কাজ করে তাহাদের প্রাণের ভিতর
বাঁচায়ে রাখিতে আছে তাহাদের বুকে-বুকে জীবনের স্বাদ
কোন্ ইচ্ছা- কোন্ ক্ষুধা- সে-কোন্ উল্লাস-
আমিও তাদের মতো- হৃদয়ে আমার
ব্যথা এক- উৎসবের মতো বেদনার
অস্থির আঘাত এক বার-বার উঠিতেছে জেগে
পশ্চিম মেঘের বুকে নিরাশার সব রক্ত ঢেলে
পাপেরে দ্বীপের মতো জ্বেলে
জ্বলিয়া উঠিতে চাই নক্ষত্রের মতন আবেগে!