নির্জন হেমন্ত-রাতে

নির্জন হেমন্ত-রাতে যুবকেরা ব’সে আছে পাহাড়ের নিচে তীক্ষ্ণ কঙ্করের ‘পরে
ঘুমাতে নিষেধ নাই- জাগিতে নিষেধ নাই- তবু যেন তাদের হৃদয়
কোনও কুয়াশার বিবরের থেকে কোনও প্রাথমিক কারণকে খুঁড়িতেছে
অন্ধকার কূপে ঢিল ছুঁড়ে একটি বৃত্তের মতো বেড়ে উঠে
শেষ সমুদ্রের সৈকতের শব্দ শোনে
কাদের মারিতে হবে, জানে না ক’- তবুও নির্দেশ আছে

কোনও পুরজ্যেষ্ঠ- কোনও সেনাপতিদের কাছ থেকে তত নয়
যেন কোনও নিরালোক অন্তরীক্ষ থেকে:
তোমাদের শতাব্দীর এ-জীবন মরণের মারণের তরে
শীতরাতে শজারুর মতো তীক্ষ্ণ আতঙ্কের রোমহর্ষ নিয়ে দল বেঁধে- পরিবার বেঁধে
সুড়ঙ্গের সমাশ্রয়- নিশ্চয়তা তোমাদের;- তবু মৃত্যু তোমাদের।

পরিণতিশীল- তোমাদের চেয়ে ঢের মহত্তর কোনও এক অ্যানাটমি
তোমাদের মাংসের অপরূপ লঘুমনস্কতা ভালোবাসে
তাই সে মশাল-হাতে অরণ্যের নক্ষত্রের ষড়যন্ত্র
কোটের পকেটে রেখে মূল্যবান চার্টের মতো- শ্রেষ্ঠ মুখ নিয়ে সফল আয়াসে
নিরুপায় পরিদের কলমের মতো তোমাদের অস্ত্র আজ শিরঃপীড়া
সেই জ্ঞান তাহা জানে

নির্জন হেমন্ত-রাতে যুবারাও জানে সব?
যেন তারা মৈথুন;- যূথচারী শুধু-
আঁধার-লালিত কোনও ভূগর্ভের আঁকাবাঁকা প্রণালীর পথে
চারি-দিকে উঁচু-উঁচু গাছ- কুয়াশার নিঃশব্দ আক্ষেপ-
মাথার উপরে নক্ষত্রের নির্ঝরিণী সব।
নীলিমার সীমাহীন হৃদয়বিহীন সমুদ্রের শান্তি পায়;
তাহাদের কাছে মৈথুন, যূথাচার, মৃত্যু শুধু।

এক দিন তারা যন্ত্র ছিল না ক’; তবু মানবীয় রক্ত নয়, আত্মা নয় আজ আর
যেন অবিরাম অন্ধ বেগ তাহাদের প্রপূরিত ক’রে ছেড়ে দিল
সময়ের হাতে: সন্নিবদ্ধ দায়িত্বের কাঁচ-কাটা-নিকেলের উজ্জ্বলতাময়
নিরেট ঘড়ির মতো; তাদের জীবন আর তটিনীর- অরণ্যের- প্রান্তরের হাতে নয়
পাহাড়ের শিঙে-শিঙে কোনও কুজ্ঝটিকা, মশা, কোনও জ্যোৎস্না, বুলবুল নাই আর

যাদের জীবন ঠিক তাহাদের মতো
কোনও এক দূর ক্যাম্পে- কোনও ঢালু পাহাড়ের নিচে কঙ্করের ‘পরে
এমনই নির্জন এক হেমন্ত-রাতের অন্ধকারে- মানবীয় বোধহীন- নিকেলের ঘড়ির মতন
যারা তাহাদের নিঃসন্দেহ ভ্রাতৃবীজ- তাহাদের মুহূর্তেক দ্বিখণ্ডিত ক’রে তবু
অনাদির সময়ঘড়ির সাথে শেষ অন্ধকারে যুক্ত ক’রে দেবে

দুইটি যমজ শব যেন কোন বৈদ্যুতিক আলোড়নের থেকে কেউ
পরস্পর সংঘর্ষের রক্তে এনে- বর্তমান মুহূর্তের সন্দিহান গর্ভিণীর ক্ষোভে
দ্বিদলের মতো ভিন্ন ক’রে- মায়াবীর মতো তবু জলের উপর দিয়ে
হেঁটে যেতে পারিবে না।
মায়াবীর মতো তবু জলের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারিবে না কোনও দিন।

আজ এই গভীর শীতের রাতে পরস্পর মুখখামুখি ব’সে তারা জানে সব:
তবু তারা শীতরাতে কোনও সমাহৃত মনোবীজ নয়-দার্শনিক নয়
এই সব মুমূর্ষুরা- অনুজেরা- খুঁজে নেবে সমন্বয়- কোনও শেষ অর্থ
কর্পূরের মতো উবে গেলে সব
হয়তো-বা সমুদ্রকে তার অন্ধকার উদূখল গর্ভ থেকে ডেকে নিয়ে
আকাশে টাঙায়ে রেখে
তাতে কোনও শ্বেত শোভা দেবে- ঢের মৃত্যু বিদ্বেষের পর
নক্ষত্রেরা প্রতিভাত হতে চায় ব’লে।