নির্জন কলম নিয়ে

নির্জন কলম নিয়ে গাঢ়
চিত্রগুপ্ত, কত-যে লিখিতে তুমি পার:
ফড়িঙের কামনারা বেঁচে র’বে!
এই হাড়হাভাতের সমস্ত দিনের কাজ লিখিছে নীরবে
এই ক্লান্ত যুবকের-
সবাই বেকার তারে বলে
তবুও সে বসে কই- সারা-দিন আটখানা পা তাহার চলে
তাড়া-খাওয়া বোর্নিওর মাকড়ের মতো
নগরের রাজলক্ষ্মী রাজযক্ষ্মা তাহার মুখের পানে চেয়ে প্রথমত
ঢের মৃত পরিচিত অবয়ব স্ম’রে
খানিকটা স’রে যায়…
ও গো দুপুরের রৌদ্র,
ও হে দিগদিগন্তের,
হে টি-ফিশ, বণিকের লাল সাদা অগণন প্রাসাদের,
ব্যবহৃত তৃপ্তি থেকে মুখখানা তুলে
সহসা মনের ভুলে
কেউ যদি পেয়ে যায় একটা কী দু’টো দান
হৃদয়ের কামনার পূরণের মতো?
এরা পায়।
গোড়তোলা জুতো শুধু হাফসোল লাগায় না
পথে-পথে ছুটিতে বিব্রত
এক দিন উড়ে যাবে মাঝশূন্যে বেলুনের প্রায়
সেই দিন লম্বকর্ণ জিরাফের গ্রীবা
হ্রেষারবে কাঁপায়ে তুলিবে এই শহরের দিবা:
‘দেখ- দেখ- লামাদের মতো স্বর্গে বেকারের জুতো উড়ে যায়!’
অই দিকে নগরীর ময়ূরাক্ষী নারীদের শ্বাসে
দুপুরের বারান্দার গরম বাতাসে
খানিকটা আচারের ঘ্রাণ যেন
দু’-চারটে কিসমিস হয়ে যদি সেই সব জারকের ঝোলে
সেই সব জমকালো শিশির ভিতরে
রয়ে যেতে চির-দিন- ছিপি-আঁটা- নিরাপদ-
হে বিচিত্র চিত্রগুপ্ত,
ঘাড় তার ক’রে আছে নিচু
কলম চলিছে তার এখনও সে-যুবকের পিছু
লিখিল সে দোয়েলের মতো তার গানের দোহার টেনে-টেনে
(কলমেরে বাজেটের বক্তৃতার চেয়ে বড় মেনে-)
(নগরের রাজলক্ষ্মী রাজযক্ষ্মা তাহার মুখের পানে চেয়ে প্রথমত)
খানিকটা স’রে যায়- ঢের মৃত অবয়ব স্ম’রে
যত জোরে টাকা- প্রাণ- টাকা- টাকা- সিকি- দু’-আনির পিছে যুবা ছুটেছিল
ছুটিল তাহার পিছে তার পর তার চেয়ে আরও ঢের অকাতর জোরে।

সাদা পায়জামা আর শার্ট প’রে দীর্ঘ কালো মকবুল মিঞার মতন
চায়ের কেটলি হাতে বিকাল হাসিছে যেন দক্ষিণা বাতাসে
কতগুলো লোক আছে এ-শহরে চুরি ক’রে ফেরে যেন সাটিনের পর্দার পিছে
ডোরাকাটা যুবা-জেব্রার মতো মাথা নুয়ে ফেল্টের ঘাসে
রৌদ্র আর আকাশের সাদা মেঘ খায় তারা
কীর্তি- প্রেম- জীবনের এনামেল-ঝর্ঝর অমৃতত্ব পায় তারা।