নব নব সূর্যে

মানুষ সার্থক হয় মাঝে-মাঝে, তবু
কতো তার নিষ্ফলতারাশি
এখনো উজ্জ্বলতর ব’লে মনে হয়
মৃত ম্যামথের পাশাপাশি
মানবকে, তবুও নিরবচ্ছিন্ন ব্যক্তির জীবন
চারিদিকে ক্ষয় হ’য়ে আসে;
সকালের সম্ভাবনা মানুষকে সচকিত করে;
আলো ঠিকরালে তবু চোখে এসে পড়ে
শেষ শূন্য- কিছু নেই, বিকেল নিভছে।
যারা আশা করেছিলো, কিংবা যারা আশা
করে নাই, যারা প্রাণে ভালোবাসবার
জ্ঞানী পরিভাষা
আয়ত্ত না ক’রে তবু প্রেম
চেয়েছিলো প্রিয় নরনারীদের কাছে
যারা শুধু বাঁচবার পথ চেয়েছিলো…
শিশিরে নিঃশব্দ হ’য়ে আছে।

সাধনায় হয়তো বা সত্য শুভ লাভ
হ’তে পারে- এরা কেউ-কেউ
সেই আভা দেখেছিলো, তবু
অন্ধ অন্নসমস্যার ঢেউ
এসে সব মুছে ফেলে গেছে
ঘর বাড়ি সাঁকো মাঠ পথ
একদিন আধ দিন ভাঙাগড়া হ’তে-না-হ’তেই
চিহ্ন নেই- সে সব মানুষ কেউ নেই।

জীবনের ঢের কাজ হ’য়ে গেলে তবু
ভাঙনের নদী এসে সমাজের দুই পার ক্ষয়
ক’রে তার অন্ধকার সমুদ্রের দিকে
ভেসে চ’লে গেছে মনে হয়।
তবু গঠনের কাজে ফিরে এসে মানুষের মন
আগেকার গ্লানিমার যে নিস্ফালন
বার-বার শেষ ক’রে দিতে চায় তার
সূচনায় আলো তবু ভিতরে গভীর অন্ধকার?

অপ্রেম বেদনা রক্ত ভয়ে ভুলে বিলোড়িত হ’য়ে
রাত্রিদিন কাজ ক’রে চলেছে লোকের ইতিহাস;
মানুষ সমাজ দেশ ধ্বংস ক’রে তবু
জ্ঞান শান্তি বাস্তবতা প্রেমের আভাস

মাঝে-মাঝে পাওয়া যায় যেন তার বিদ্যুতের কাছে;
যদিও আঁধার বড়ো- ইতিহাসে শোকাবহ অন্ধ বেগ আছে;
সংকল্প প্রেরণা মূল্য উদাসীন শক্তির মতন
ভেঙে- নব-নব সূর্যে আলোকিত ক’রে তোলে মন।

[দেশ। ২৬ অগ্রহায়ণ ১৩৬০]