নদী (সংযোজিত)

রাইসর্ষের খেত সকালে উজ্জ্বল হ’ল- দুপুরে বিবর্ণ হয়ে গেল
তারই পাশে নদী;

নদী, তুমি কোন্ কথা কও?

অশথের ডালাপালা তোমার বুকের ‘পরে পড়েছে-যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হলে,
আরও দূরে চ’লে যাই
সেই শব্দ পিছে-পিছে আসে;
নদী না কি?

নদী, তুমি কোন্ কথা কও?

তুমি যেন আমার ছোট মেয়ে- আমার সে-ছোট মেয়ে;
যত দূর যাই আমি- হামাগুড়ি দিয়ে তুমি পিছে-পিছে আসো,
তোমার ঢেউয়ের শব্দ শুনি আমি: আমারই নিজের শিশু সারা দিন নিজ মনে কথা কয় (যেন)।

কথা কয়- কথা কয়- ক্লান্ত হয় না ক’
এই নদী।

এক-পাল মাছরাঙা নদীর বুকের রামধনু
বকের ডানার সারি সাদা পদ্ম- নিস্তব্ধ পদ্মের দ্বীপ নদীর ভিতরে
মানুষেরা সেই সব দেখে নাই।

কখন আমের বনে চ’লে গেছি
এইখানে কোকিলের ভালোবাসা কোকিলের সাথে,
এখানে হাওয়ায় যেন ভালোবাসা বীজ হয়ে আছে,
নদীর নতুন শব্দ এইখানে: কারা যেন ভালোবাসা পুষে রাখে বুকে
সোনালি প্রেমের গল্প সারা দিন পাড়ে
সারা দিন পাখি তাহা শোনে; তবু শোনে সারা দিন?
পাখিরা তাদের গানে এই শব্দ তবু
পৃথিবীর খেতে মাঠে ছড়াতে পারে না,
নদীর নিজের সুর এ-যে!

নদী, তুমি কোন্ কথা কও?

গাছ থেকে গাছে আর মাঠ থেকে মাঠে রোদ শুধু ম’রে যায়
সব আলো কোন্ দিকে যায়!
নিজের মুখের থেকে রোদের সোনালি রেণু মুছে ফেলে নদী
শেষ রেণু মুছে ফেলে
সে যেন অনেক বড়ো মেয়ে এক- চুল তার ম্লান- চুল সাদা-
শুধু তার ফুল নিয়ে খেলিবার সাধ-
ফুলের মতন কোন্ ভালোবাসা নিয়ে,
ধানের কঠিন খোসা- খড়- হিম- শুকনো সব পাপড়ির মাঝে সেই মেয়ে
ইতস্তত ব’সে আছে;
গান গায়;
নদীর- নদীর শব্দ শুনি আমি।

নদী, তুমি কোন কথা কও?