নদী

এখন সূর্যের তেজ রেলওয়ে স্টেশনের গায়ে
ব্যথা দিয়ে যায় লাল ইটে
খাকির পোশাক প’রে পিছল পিয়ন
ফিরে যায় তার বিটে
স্টেশনের পাশে নদী ইস্পাতের মতো
রেল-লাইনের সাথে- সমান্তরালে
ভুলে যায় তার জলের করুণা
তীক্ষ্ণ বিক্ৰীড়িত তরঙ্গের ফালে

এঞ্জিন শান্টিঙ ক’রে চ’লে যায়
কালো নীল জামা-গায়ে দু’-চারটা কুলি
গুমটির অগ্নির ভিতরে
অনন্ত কালের শ্যাওড়াফুলি
শূন্য অনুধাবনায় জলে ফেঁপে ভিড় থেকে নদী উঠে এসে
গড়ায়ে-গড়ায়ে ভেঙে প’ড়ে গোল হয়ে
মেঘের ভিতরে নিরুদ্দেশে
লুপ্ত হয়ে- দাঁড়ায়ে রয়েছে তবু দু’-এক নিমেষ
এ-পৃথিবী দাঁড়াবার মতো কিছু নয়
এক দিন পৃথিবীতে জল ছিল ব’লে
প্রতীকের মতো আজও নদী থেমে রয়
পুনরায় পৃথিবীতে জল পাওয়া যাবে
মানুষের ধারণার মতো চুপে যদি
তোমার আমার চোখে এসে থেমে থাকে
সাধারণ বিকেলের নদী

উড়েছে সে ভারতীয় শাপ পরভৃত
গঙ্গা পদ্মা ঝিলমের আকাশের জলে
হাজার-হাজার রূপ ধ’রে
দুপুরের রৌদ্রের অনলে
নিজেকে প্রথম ডোডো মনে করেছিল
নিজেকে কবরে পাঠাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল
তার পর এসেছিল ছায়ার বিকাল
মধু ও মোমের রঙে মৃত ক্রীতদাসীর আগুনে
আজ সবই অসুর্বানিপাল।