নদী নক্ষত্র মানুষ

‘এখানে জলের পাশে বসবে কি? জলঝিরি এ-নদীর নাম;
অপরূপ; আমি তবু ঝাউবনী বলি একে’- আস্তে বললাম।
নদীর দুপারে ঢের উঁচু-উঁচু ঝাউবন, নীড়-
চুপচাপ ঘাসের উপরে ব’সে কিছুক্ষণ তারপরে আমরা দুজনে
কোনো কথা খুঁজে তবু পেলাম না আর যেন-
নদী যেন ঢের দূরে- আমাদের মনে
এ-মুহূর্ত এ-আকাশ নেই আর আজ;
বিষণ্ণতা: তাও নেই- পাতা ঝরবার
স্বর শুনি, ঢেউ নড়বার শব্দ পাই;
এই পৃথিবীতে যেন কিছু নেই আর।

একদিন- জানি আমি- সম্পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমাদের মনে;
‘নক্ষত্রের নিচে শিশিরের গল্প শোনায়েছি শুনেছি দু’জনে
চোখাচোখি ব’সে থেকে; হাতে হাত নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস
না জানতে মিশে গেছে- যেমন মাটির গন্ধ হৃদয়ে ফোটাতে চায় ঘাস,
ধান খই দূর্বাঘাসে যেমন মাটির ইচ্ছা নিজেকে রাখতে চায় ঢেকে
একদিন পৃথিবীর বিলোড়ন রৌদ্র রিক্ত আহ্বানের থেকে
দূরে স’রে প্রেম আর আকাঙ্ক্ষার ঘরে ব’সে আমাদের ব্যাপৃত হৃদয়
আকাশ ও এ-মাটিকে পেয়েছিলো এক তিলে- ‘ বললাম; আস্তে তখন
সে বললে- ‘শেষ সত্য নদী নয়,- মন- ‘

আমি তাকে: ‘হয়তো নতুন কোনো রূপে
আমাদের ভালোবাসা পথ কেটে নেবে এই পৃথিবীতে;-
আমরা দুজনে এই বসে আছি আজ- ইচ্ছাহীন;-
শালিক পায়রা মেঘ পড়ন্তবেলার এই দিন
চারিদিকে;
এখানে গাছের পাতা যেতেছে হলুদ হয়ে- নিঃশব্দে উল্কার মতো ঝরে
একদিন তুমি এসে তবু এই হলুদ আঁচল রেখে ঘাসের ভিতরে
শান্তি পাবে; সন্ধ্যার জলের দিকে শূন্য চোখে রবেনাকো তাকিয়ে এমন
অস্পষ্ট সংকটে এসে- মুখে কথা ফুরোবে না- এখন যা গভীর গোপন
প্রাণের চারণা পাবে অন্ধকারে; ব্যাপ্তি পাবে; যেইসব কথা
ভুলে গেছো- যে নিয়ম অনুভূতি কবেকার সহজ স্পষ্টতা
হারিয়েছে- নতুন জীবন পাবে তারা সব- ‘ বলে মনে হল কোলাহল
মানুষের শোচনার শব্দ যেন;- নদীদের অন্ধকার জল
জীবনকে স্থিরভাবে ব্যবহার করে নিতে বলে
প্রেমের নিকটে গিয়ে- কিন্তু অপ্রেমের ফলাফলে
নিজের জ্ঞানের গতির প্রবাহ থেকে চ্যুত হয়ে নয়:
যে রকম এই নদী আর এই নারী নিজ বাস্তবতা নিয়ে তন্ময়।

দেশ। ২ আশ্বিন ১৩৬০