নদীর জলের থেকে

নদীর জলের থেকে ফিরে এসে বিবর্ণ টালি’র নিচে ঘরে
এখন এসেছি আমি- চারি-দিকে ম্লান দেয়ালের
আঘ্রাণ আঁধার ছুঁয়ে সুখ পেল- তা হলে এখন
তাদের হাতের কাজ আবার আরম্ভ হতে পারে
ক্রমেই স্থবির হয়ে দেয়ালের খোঁড়লের অন্ধকারে তারা
অবশেষে লুপ্ত হয়ে যেতে চায়- যে-সব মানুষ
অন্ধকারে ব’সে থেকে এই কথা অনুভব করে
তাদেরও দেয়াল ব’লে মনে করে- জ্ঞানের গম্ভীর মূখর্তায়
তাহারা নিস্তব্ধ হয়ে কাজ করে
যদিও সস্মিত মুখে অন্য এক অনুভব আমি
ফিরে পেতে চাই ক্রমে। প্রথমত মনে করি জল।
সবুজ জলের হর্ষ ব্যতিরেকে আমার হৃদয়
দ্বিতীয় কী বস্তু আর?- এখুনি তো নদীর ভিতরে
(পদ্মা, গঙ্গা, লিফি, টেমস, নেকারের বিম্বের ভিতর)
ফেনিল মাছের শল্ক ছুঁয়ে ছিল আমার হৃদয়
তবুও ক্রমেই আমি টের পাই ধীরে
যুগল হংসী’কে দেখে বিকেলের ফিরোজা আলোয়
নদীর শপথ শুধু দূর থেকে অনুভব ক’রে গেছি আমি
পেয়েছি জলের গন্ধ দেয়ালের গর্তে উদ্ভিদের
অসূয়াসূচক ধূর্ত হাসির ভিতরে
মনে হয়েছিল যেন নদীর ভিতর থেকে স্নিগ্ধ বামনের
দাড়ি নিয়ে উঠেছে সে- অনেক বিমুক্ত জ্ঞান, রুচি, পুরস্কার
রয়ে গেছে তার কাছে- আমরা বিন্দুর মতো ভেসে
যেতে পারি; কোথাও নদীকে তবু পাই নাই- সকল বধির
শুষ্ক হয়ে প’ড়ে আছে গুগলি’র শামুকের ‘পরে
বিষয়াসক্তের মতো খাঁজ কেটে- যেখানে বিষয়
নেই কিছু পৃথিবীতে- রসাতলে- মানুষের প্রাণের ভিতরে
সতত হৃদয় তাই বিবর্ণ বিস্ময়ে
নারীদের কথা অনুচিন্তা করে- দেয়ালে টাঙানো
মৃত এক রমণীর স্তব্ধ তৈলচিত্রের আলোয়
ক্ষণিক ইশারা পেয়ে
মাঝে-মাঝে আমিও দেখেছি এই ছবি
কার ছবি? কোথায় শিল্পীর সংক্রামণ
যেখানে এমন রেখা অভিক্ষিপ্ত হয়েছিল এক দিন
মহাশ্বেতা, মালবিকা, দেবযানী আমাদের অকৃত্রিম আজব রগড়ে
ফুরায়ে যেতেছে ব’লে অবিকল অন্ধকার থেকে সমীচীন
পারদ সংগ্রহ ক’রে নতুন মুকুর গড়েছিল?

তবুও দেয়াল থাকে অন্ধকার- স্থির- চতুষ্কোণ
দেয়ালের মতো ভাবে- পৃথিবীর রাজপথে- রক্তপথে- নোনা পথে আমি
আমার নিজের অনুষঙ্গ ভেবে তাকে
অনুভব ক’রে গেছি- যেমন মেঘের রাতে পঞ্চমীর চাঁদ
দু’টো তীক্ষ্ণ শিং তুলে অঝোর অদূরবর্তী আর্দ্রা-নক্ষত্রকে
টের পায়- অনেক আলোকবর্ষ ব্যবধানে রয়ে গেছে- তবু-
সাধারণ মানুষের চোখে তারা একটি সঙ্কল্পে জ্যোতিষ্মান।