নগ্ন নির্জন হাত

আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠছে:
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।
যে আমাকে চির-দিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনও দিন দেখি নি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন-আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠছে।

মনে হয় কোনও বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।

ভারত-সমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্য-সাগরের কিনারে
অথবা টায়ার-সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোনও এক নগরী ছিল এক দিন,
কোনও এক প্রাসাদ ছিল;
মূল্যবান আসবাবে-ভরা এক প্রাসাদ:
পারস্য-গালিচা, কাশ্মিরী শাল, বেরিন-তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা,
আর তুমি, নারী-
এই সব ছিল সেই জগতে এক দিন।

অনেক কমলা-রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা-রঙের রোদ ছিল,
অনেক কমলা-রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।

ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা,
লুপ্ত নাশপাতির গন্ধ,
অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধূসর পাণ্ডুলিপি,
রামধনু-রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায়-পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরও দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস-
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।

পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ,
রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ!
তোমর নগ্ন নির্জন হাত;

তোমার নগ্ন নির্জন হাত।