নক্ষত্রেরা আজও আসে

নক্ষত্রেরা আজও আসে রোজ রাতে- এক দিনও দেয় না ক’ ফাঁকি
রাত বাড়ে;- সমস্ত আকাশ আরও নীল- আরও বিস্তৃত বিশাল
হয়ে ওঠে,- এইখানে ঘাসে আমি যদি শুয়ে থাকি
ঘাসের উপরে শুয়ে এখানে অনন্ত কাল

রাত্রিমাখা আকাশের মুখ
আমি যে দেখিতে চাই- নক্ষত্রের রুপালি আগুনভরা শব্দহীন রাত
আমি যে দেখিতে চাই- জীবনের কলরব, বেদনা, অসুখ
আমি যে ভুলিতে চাই- পৃথিবীর মিথ্যা ইচ্ছা অন্ধতা আঘাত

নিয়ে আসে বুকে ক’রে- আনে মৃত্যু, আনে রক্ত, অঙ্গার শূন্যতা
নীলাভ রাত্রির দিকে নক্ষত্রের দিকে ক্লান্ত মন
স’রে আসে; সৌন্দর্যের সাড়া পায়; আত্মনের কথা
কোনও দিন জননীর কাছেও কি জেনেছি এমন

যেমন রাত্রির কাছে পাই আমি- উঁচু-উঁচু শাখার ভিতরে
রাত্রির নরম হাত নড়িতেছে- নক্ষত্রেরা বাঁধিয়াছে নীড়
নিঃশব্দ সোনালি চিল তারই মাঝে খড়কুটা-কঞ্চির ঘরে
ঘুমাতেছে; রাত্রি আরও হতেছে গভীর

প্রান্তরের অই পারে কাদের তাঁবুর কলরব
বহু ক্ষণ রূঢ়তায় জেগেছিল- উচ্ছৃঙ্খল ক্ষুধার উল্লাসে
এখন থামিয়া গেছে- ঘুমায়েছে সব
ক্যাম্পের আগুন সব নিভে গেছে- গভীর অসীম নীল প্রান্তরের ঘাসে

মানুষ দু’ দণ্ড আসে
দুর্বিনীত বিচ্ছৃঙ্খল শিশুর মতন
কথা কাজ উদ্যমের রক্ত নিষ্ফলতা শুধু ভালোবাসে
রাত্রি আর নক্ষত্রের স্পর্শে নদী ঘাস গাছ পতঙ্গের মন

ধরা দেয়;- তাঁবুর আঁধারে যারা ঘুমায় ঘুমাক
আশ্চর্য নিশীথ এই- আকাশের জানালার থেকে জানালায়
হরিতকী-শাখা থেকে শোনা যায় কোকিলের ডাক
বাবলা’র অলিগলি দিয়ে পেঁচা চুপে উড়ে যায়

আরও দূর প্রান্তরের পারে- দূর নক্ষত্রের পানে
আশ্চর্য নিশীথ এই- এই ঘাস সুগন্ধি গভীর
আমলকী জাম নিম ঘুম নাহি জানে
এ-আকাশ এই তারা এই বনানির

আঁধার আনন্দে আমি- আমিও মিশিয়া যাব কবে
জামের বুকের থেকে যে নতুন শাখা
এক দিন আকাশের কোলে ফুটে র’বে
যে-প্রান্তর এক দিন মেলে দেবে শকুনপাখির মত পাখা

পৃথিবীর অন্ধকারে; এক দিন যেই অন্ধকার
কথা ক’বে আকাশের জানালায় গিয়ে
এক দিন যে-নক্ষত্র ঐ দূর আকাশের নীলাভ শয্যার
নিরুদ্দেশ চুপে খুঁজে নিয়ে

দুর পথে চ’লে যাবে, জানি
আমারে খুঁজিয়া পাবে তাহাদের মাঝে
আমি আজ এক দণ্ড পৃথিবীর প্রাণী
হয়তো অনেক দূরে চ’লে যাব আমি কাল জাফরান সাঁঝে।