নতুন শহরে

অনেক পুরানো দিন থেকে উঠে নতুন শহরে।
আমি আজ দাঁড়ালাম এসে
চোখের পলকে তবু বোঝা গেল: প্রেমিকের যাত্রার সূচনা
শুরু হয় অপরের যাত্রার শেষে।

এখানে রয়েছে ভোর, নদীর সমস্ত কালো জল
পুরানো মনের ব্যবহারে তবু হাত বাড়াতেই
দেখা গেল স্বাভাবিক ধারণার মতন সকাল
অথবা তোমার মতো নারী আর নেই

তবুও রয়েছে সব- নিজেদের আবিষ্ট নিয়মে
সময়ের কাছে সত্য হয়ে
কেউ যেন নিকটেই রয়ে গেছে ব’লে
এই বোধ ভোর থেকে জেগেছে হৃদয়ে

আগাগোড়া নগরীর দিকে আমি চেয়ে দেখি সকালবেলায়
অতীব জটিল ব’লে মনে হল প্রথম আঘাতে
সকালবেলার মতো স্থান যেন নয়
দুপুরবেলার দেশও বহু দিন সয়েছিল ধাতে

জ্ঞান মানমন্দিরের পথে ঘুরে বই হাতে নিয়ে
কনফুসিয়াস থেকে কার্ল মার্ক্স অব্দি চর্চা ক’রে
মনে হয় নগরীর শিয়রের অনিরুদ্ধ উষা সূর্য চাঁদ
কালের চাকায় আজ আৰ্ষ-প্রয়োগের মতো ঘোরে

বিচ্ছিন্ন ঘর্ঘর শব্দ বেজে ওঠে আকাশের এরোপ্লেন থেকে
শব্দের মানের লোভে তবুও ব্যাহত হয় মন
এক দিন হবে তবু এরোপ্লেনের
আমাদেরও শ্রুতিবিশোধন

যদিও আগুন, মৃত্যু, অন্ধকার নিয়ে এরা ঘোরে
আমিও বস্তুর দাস নই কোনও দিন
প্লেটো’র ঘোড়া’র মতো হয়ে উঠে তবু
হয়ে যাবে হয়তো সে পুরাতন মনিবের চেয়েও প্রবীণ

এক দিন দূর থেকে প্রপেলার সময়ের দৈনিক স্পন্দনে
নিজের গুরুত্ব বুঝে হতে চায় আরও সাময়িক
রৌদ্রের ভিতরে ঐ বিচ্ছুরিত এলুমিনিয়ম
দ্যাবা-পৃথিবীর মধ্যবর্তিনীর মতো যেন ঠিক

ক্রমে শীত, স্বাভাবিক ধারণার মতো এই নীচের নগরী
আরও কাছে প্রতিভাত হয়ে আসে চোখে
সকল দুরূহ বস্তু সময়ের অধীনতা মেনে
মানুষ ও মানুষের মৃত্যু হয়ে সহজ আলোকে

দেখা দেয় সর্বদাই মরণের অতীব প্রসার
জেনে কেউ অভ্যাসবশত তবু দু’-চারটে জীবনের কথা
ব্যবহার ক’রে নিতে গিয়ে দেখে অলক্লিয়ারেরও চেয়ে বেশি
প্রত্যাশায় তীক্ষ্ণ কাল ভোলে নি প্রাণের একাগ্রতা

আশা-নিরাশার থেকে মানুষের সংগ্রামের জন্ম-জন্মান্তর
প্রিয়দের প্রাণে এক মনোমত প্রভাতের আভা নিয়ে এসে
সে প্রভাত হয়ে গেছে হিরোসিমা ময় উর কবে
বহু সূর্য পরিব্রজ্যা শেষ হলে আর তার স্মরণাবশেষে।