অঘ্রাণ প্রান্তরে

‘জানি আমি তোমার দু’ চোখ আজ আমাকে খোঁজে না আর পৃথিবীর ‘পরে-‘
ব’লে চুপে থামলাম, কেবলই অশ্বত্থ-পাতা প’ড়ে আছে ঘাসের ভিতরে
শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;- অঘ্রান এসেছে আজ পৃথিবীর বনে;
সে-সবের ঢের আগে আমাদের দু’ জনের মনে
হেমন্ত এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব বিছানো পাতার
মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন-যে- সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েছে জলে-‘, কিছু ক্ষণ অঘ্রানের অস্পষ্ট জগতে
হাঁটলাম, চিল উড়ে চ’লে গেছে- কুয়াশার প্রান্তরের পথে
দু’-একটা সজারুর আসা-যাওয়া; উচ্ছল কলার ঝাড়ে উড়ে চুপে সন্ধ্যার বাতাসে
লক্ষ্মীপেঁচা হিজলের ফাঁক দিয়ে বাবলার আঁধার গলিতে নেমে আসে;
আমাদের জীবনের অনেক অতীত ব্যাপ্তি আজও যেন লেগে আছে বহতা পাখায়
ঐ সব পাখিদের; ঐ সব দূর- দূর ধান-খেতে, ছাতকুড়ো-মাখা ক্লান্ত জামের শাখায়;
নীলচে ঘাসের ফুলে ফড়িঙের হৃদয়ের মতো নীরবতা
ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রান্তরে বুকে আজ…. হেঁটে চলি… আজ কোনও কথা
নেই আর আমাদের; মাঠের কিনারে ঢের ঝরা ঝাউ-ফল
প’ড়ে আছে; খড়-কুটো উড়ে এসে লেগে আছে শাড়ির ভিতরে,
সজনে পাতার গুঁড়ি চুলে বেঁধে গিয়ে নড়ে-চড়ে;
পতঙ্গ পালক জল- চারি দিকে সূর্যের উজ্জ্বলতা নাশ;
আলেয়ার মতো ঐ ধানগুলো ন’ড়ে শূন্যে কী রকম অবাধ আকাশ
হয়ে যায়; সময়ও অপার- তাকে প্রেম আশা চেতনার কণা
ধ’রে আছে ব’লে সে-ও সনাতন;- কিন্তু এই ব্যর্থ ধারণা
সরিয়ে মেয়েটি তার আঁচলের চোরকাঁটা বেছে
প্রান্তর নক্ষত্র নদী আকাশের থেকে স’রে গেছে
যেই স্পষ্ট নির্লিপ্তিতে- তাই-ই ঠিক;- ওখানে স্নিগ্ধ হয় সব।
অপ্রেমে বা প্রেমে নয়- নিখিলের বৃক্ষ নিজ বিকাশে নীরব।

কবিতা। আশ্বিন ১৩৫৮