অগ্নি

আত্মপ্রত্যয়ের অগ্নি, হে সন্তান, প্রথম জ্বলুক তব ঘরে।
জানো না কি রাত্রি এসে ঘিরিতেছে আরও-এক দীর্ঘতর বৃত্তে রোজ
মানুষের জীবনকে।
যে-সব সৌন্দর্য র’চে গিয়েছিল এক দিন মেধাবীরা
আজ এই রজনীর অবরোধে মনে হয়
তাহাদের জ্যোতি যেন বিস্ফোরক বাষ্প হয়ে জ্বলে
সহসা আকাশ-পথে দিকহস্তীদের মতো- অদ্ভুত- অভিষ্ণু মদকলে;
কোনও আমলকি নাই আজ আর শিল্পীর নির্জন করতলে।

এখানে দাঁড়ায়ে থেকে ন্যূব্জ ছবি চোখে পড়ে পৃথিবীর:
বিবর্ণ পাথরে গড়া প্রান্তরের পীঠে এক ধর্মমন্দিরের;
আশি বছরের বুড়ো শীতের কুয়াশা ঠেলে সেই দিকে চলিয়াছে একা:
হয়তো বাজাবে ঘণ্টা, হয়তো সে সারাৎসার বিধাতাকে কাছে পাবে:
আমরা যেমন ক’রে পাই মৃত্তিকাকে, মৃত্যুকে।

পীবর মাটির মতো নিষ্কাশিত হয়ে যেন পৃথিবীর জরায়ুর থেকে
মাঠের কিনারে ব’সে শুষ্ক পাতা পোড়াতেছে কয়েকটি নির্মূল সন্তান;
তারা খাদ্য চায়; তবুও অভুক্ত পেটে তরবার হাতে নেবে-
যোদ্ধার মতন নয়; নকল সৈন্যের যত কলরবে পাঁচালির দেশে।
কৌতুকে- গোলার সব মৃত- পরাহত- ধান থেকে মেড়ে
যদি কেউ অন্যতম আলেয়ার রস এনে দিয়ে যেত তাহাদের।
কেউ দেবে না ক’ আজ এই তুণ্ডসমীচীন পৃথিবীতে।

মাথার উপর দিয়ে অনেক সন্ধ্যার কাক
প্রথম ইশারা নিয়ে উড়ে যায় আবির্ভূত গম্বুজের দিকে।
সেই পথে আমাদের যাত্রা নেই, হে সন্তান!
বৃত্তের মতন সূর্য- পশ্চিমের-
মৃত প্রলম্বিত- হাঙরের মতো-
মেঘের ও-পার থেকে
প্রতিভার দীর্ঘ বাহু বাড়ায়ে দিয়েছে মেঠো হাঁসের ডানায়,
শস্যহীন খেতে,
গফুরের শীর্ণ গোলাঘরে, শ্মশানে, কবরে, আমাদের সবার হৃদয়ে।
এই প্রত্যয়ের থেকে গভীর অগ্নির জন্ম হয়।