অন্ধকার এল যেন

অন্ধকার এল যেন কোনও লুপ্ত নগরীর বারবনিতার মতো
আশ্চর্য প্রকোষ্ঠে ঢের
বহু রাজপথ মানুষের অন্তর্গত ঢের রুধিরের নদী যেন
স্মরণীয় নিশীথের মতো তার কালো বায়ুহীন চোখে
পেয়েছে নির্জন সমন্বয়
কোনও দিন প্রবীণ নৃপতি ছেড়ে কোনও কুমারের পানে
অপাঙ্গে সে দেখে নি তাকায়ে- সেই প্রগলভতা অনুভব করে নাই
স্থবির হয় নি তবু- গ্রীবা যেন রাজহংসীর রূপসির মতো তার
চারি-দিকে গোধূলিশেষের স্থির হিম নদী কালো চাদরের মতো যেন;
মনীষার শেষ প্রণয়ের প্রত্যাসন্ন বায়ু অনুভব করিতেছে
তিলফুল-তীক্ষ্ণ নাকে তবু তার গন্ধর্বীর মতো রূপে যেন
ধর্মযাজিকার কালো অবগুণ্ঠনের ছায়া টেনে;
দ্বিরুক্তির স্থান আর নাই তার পবিত্র নির্জন ঠোঁটে-
ব্যথিত কপালে;- তাহাদের তরে- যাহারা সাম্রাজ্য নিয়ে
আসিবে তাহার কাছে- প্রেম নিয়ে নয়;
যেন এক দীর্ঘ ছন্দ ধীর গভীরতা ঢের নক্ষত্রের নিচে বেঁচে থাকে
কোনও প্রশ্ন- কোনও সমাধান নিয়ে যেন বালখিল্য নেই আর তার
যারা বামনের মতো পৃথিবীর পথে হাঁটে- যারা চীনে-কাগজের
নৌকায় চ’ড়ে যেন জীবনের নদী পার হয়ে যেতে চায়
যারা পথ থেকে ঢিল তুলে তারে গৃহের দেবতা ব’লে
কর্নিশের কাছে রেখে দেয়- রজনীতে মৃদু স্বপ্ন দেখে- তৃপ্ত হয়
স্বর্ণ-রাসভের রথে চ’ড়ে স্বর্গে যেন চ’লে যায় মরণের পর
যারা দূর নীল সমুদ্রের পারে গিয়ে কোনও ধ্বনি শোনে না ক’
(কানের পটহ যারে সকল ধ্বনির সাথে নিয়ন্ত্রিত ক’রে
নব সময়ের গর্ভ থেকে আরও এক উদ্বর্তিত হৃদয়ের জন্ম দেয়
নিস্তব্ধতা চায় তার পর;)- সমুদ্রের নীল রঙ্ দেখে
পাথর ঝিনুক নুড়ি সমারোহে তুলে নিয়ে
যারা ঘরে ফিরে আসে শুধু-
যারা ঢের প্রবাসের পথে ঘুরে কোনও নবতর মৃত্যু পায় না ক’
(কোনও নির্বাণের স্বাদ);- কিংবা এই জীবনকে বিহঙ্গের মতো মনে করে না ক’
মরণের বিহঙ্গীকে কথা বুঝাতেছে- তাদের প্রথম ডিম জন্মিবার
হয়তো-বা এসেছে সময়;-
যারা এই সব অনুভব করে না ক’; যাহাদের দেহের উপর দিয়ে
কোনও বায়ুস্তর চ’লে যেতে-যেতে কোনও গোপনীয় নিমন্ত্রণ
টের পায় না ক’: বাহিরের বহু-বিসারিত শূন্যতার থেকে
যেন কোনও তীর্থে এল- অবশেষে- এই অনুভব নাই
তাহাদের জীবনকে অশালীন- তুচ্ছতার অবতার ব’লে মনে করে এই অন্ধকার
যেন ঢের অবলুপ্ত নগরীর এই রাজনটী- এই বারাঙ্গনা
বহু রাজপথ- আশ্চর্য প্রকোষ্ঠ ঢের- মানুষের অন্তর্গত
বহু রুধিরের এই নদী যেন-
যেন এক দীর্ঘ ছন্দ ধীর গভীরতা ঢের নক্ষত্রের নিচে বেঁচে থাকে।