অনেক আগের কথা

অনেক আগের কথা; এক জন বালিকাকে দেখা যেত রোজ
প্রান্তরের পথ দিয়ে চ’লে যায়; মলিন চুলের ‘পরে ভোরের বেলায়
হয়তো-বা মাকড়ের ছেঁড়া জাল- শিশিরের অবলেপ- অথবা আলোর
চোখে ঘুম- সূর্য এড়ায়ে যেন ভীরু খরগোশ
শুকনো পাতার ‘পরে সরসর ক’রে যেত- এখনও বাতাসে তার ভূত
ধূসর রোমের ঘ্রাণে লেগে আছে- সর্বদাই স্বর্গের কাপড়
দুরূহ আগাছা আর পলির মাটির দেশ থেকে
বার হয়; সমস্ত প্রান্তর ভ’রে রেখে দেয় আজও।
হেমন্তের নদীর নিকটে ক্ষীণ
বাবলা’র হলুদ ফুলের মতো অকৃত্রিম গোল
করুণাকে আবার জননী ব’লে মনে হয়- কড়ি, করোটির।
তখন এ-সব তবু বালকের চোখের তারায়
ছবির মতন ছিল; মলিন দেয়ালে আঁটা ফ্রেমের ছবির মতো
আরশোলা- মাকড়ের- নিজেদের; মানুষকে দেখাবার মতো কিছু নয়।
আজ তবু ঢের দূরে ব’সে থেকে- হেমন্তের অস্পষ্ট নির্দেশে
অন্ধকারে সেলাইয়ের কল নেড়ে মাড়ু দরজির মতো স্বাদে
জোড়াতালি দিয়ে যাই যে-সব কাপড় ছিঁড়ে ফালি হয়ে গেছে বহু দিন।
বালিকা সে- তবুও বালক, বুড়ো, খরগোশ, আরশোলা হলেও সে হত
প্রথম ভোরের দৃশ্যে- উঁচু-উঁচু তিত্তিরাজ-গাছের ছায়ায় রোজ তাকে
পাওয়া যেত আপনার অল্প কাছে- পৃথিবীর মতো ন্যূব্জতায়
তাই সে হৃদয়ে ঘোরে সূর্যকে ঘিরে চির-দিন।