অনেক আগের কথা

অনেক আগের কথা- এক দিন এক জন চীন-মান্দারিন
সহসা মুখর হল কোনও এক শিল্পীর সিঁড়িতে নেমে এসে
প্যাগোডা’র পাশে বড়ো শস্যখেত রয়ে গেছে- অন্নের ফুলের
নিকটে শিমিঙ নদী- চীনের প্রবীণ ইতিহাসে
তার কোনও নাম নেই- উদ্ভিদজ সাপের মতন
সর্বদাই তার গায়ে জলের উচ্ছ্বাস- বিম্ব- পাললিক রং
অনেক অদ্ভুত গুল্ম নদীর সংসর্গে জ’ন্মে অ্যাক্যুয়ামেরিন
মণির মতন জ্বলে- ঘোড়ার দুধের মতো সাদা
ম্লান পালকের হাঁস- রাজহাঁসগুলো
সততই ঈশ্বরের অপরূপ দ্বৈতের মতন পরস্পর
জলের উপরে ভেসে সবুজ জলের নিচে ম্লান
আবছায়া টেনে নেয় যেখানে যখন চোখে পড়ে
নদীর কিনারে সব দীর্ঘ, কালো মেহগেনি, দেবদারু, ফার
আধো-অন্ধ শিল্পীদের জলের তুলির থেকে ক্রমে
বার হয়ে দাঁড়ায়ে রয়েছে চুপে জলের স্তম্ভের মতো উঁচু
ন্যূব্জ নীলিমার গায়ে ঠেস দিয়ে- অভিজ্ঞতায়
এমন জলের রং- রেখা- উল্কি- সততই তাহাদের গায়ে
মনে হয় মাঝে-মাঝে নদীর ভিতর থেকে মাছ
পিচকিরি দিয়ে উড়ে সেই সব গাছের হৃদয়ে
সারা-দিন কানকোর আলোড়নে খেলা ক’রে নতুন সমাজ
গ’ড়ে যায়।
আমিও ঘোড়ায় চ’ড়ে পাহাড়ের পথ থেকে ফিরে
(কঠিন তৃষ্ণার্ত হলে তবে)
পিপাসায় ধরা প’ড়ে গিয়েছি যখন
নদীর জলের চেয়ে বরং সে স্তব্ধ বৃক্ষদের
জলের শরীর খাই- স্ফটিক গেলাসে ক’রে জল
ভ’রে নিয়ে চ’লে যাই- প্রাসাদের দিকে-
ব’লে গেল মান্দারিন- শিল্পীর নির্জন দেয়ালের
ছবির ভিতর থেকে- অসূয়াসূচক মাথা নেড়ে
অবজ্ঞায়- তামাশায়- নিজের অবস্থা দেখে থুতু
সহসা ছিটায়ে দিল সুপুরুষ নিজের স্রষ্টাকে লক্ষ ক’রে
নিমেষেই এক ভিড় কানসোনা মাছি
গয়েরের ঘ্রাণ পেয়ে- সূর্যের আলোয় উড়ে মেঝের উপরে
জড়ো হয়ে গেছে দেখে নির্মল, মেধাবী মান্দারিন
নিজেকে অঙ্কিত ক’রে রেখে দিল পুনরায় ছবির ভিতরে
রগড়, আলোেক, শিল্প, শালীনতা আমাদের ক্লান্ত পৃথিবীতে
এক দিন বেঁচে ছিল নিজের অজ্ঞেয় প্রতিভায়।