অনেক বন্দর ছিল

অনেক বন্দর ছিল উজ্জ্বল আলোকে দীপ্ত- এখন তা নেই
পরীক্ষাগারের মতো ছিল সব এক দিন নিসর্গের কাছে
মানুষ সে-সব স্থানে অনেক প্রদীপ্ত লোহার ফ্রেম এনে
আশ্রয়, এয়ারোড্রোম, এরোপ্লেন, কাল্পনিক দীর্ঘ সারসের মতো অপরূপ ক্রেনে
ভ’রে দিয়েছিল বায়ু; মালাট্টো, নিগ্রো, চীনে, বাঙ্গালি, গোয়ানি, শিখ এসে
কখনও সেখানে হাওয়া খেয়ে গেছে- মুহূর্তের অবসর, উদরের অগ্নি ভালোবেসে
খালাসি পাচক কুলি কেরানির স্বচ্ছতায়- ক্বচিৎ কখনও সেই স্বর্গ-নরকের
চাঁদনির চকে তারা জাপানি লণ্ঠন, জিভ, জোনাকি’র জ্যোতি জ্বেলে আসর জমায়েছিল ঢের
তার পর এক দিন তারা সব উবে গেল- অথবা কখনও তারা ছিল না সেখানে
পড়েছে উল্কির চিত্রে সে-দেশের কথা শুধু- ইটালি’র গণিকারা জানে
ভূমধ্যসাগর-পারে কিংবা তার কিছু দূরে কুহুলিন-কীল-লামু-মিয়ন সিন্ধুর কাছাকাছি
সেই এক দেশ ছিল- হিমের আলোয় তারা মাটির বুনুনি থেকে উঠে
আধো-দেবদূত আধো-জানোয়ারদের মতো এই পৃথিবীকে খুঁটে
খেতেছিল; হয়তো জান্তব ধাতু তারা সব, তবু সাদা সারস-চক্রের
পেঙ্গুইন, ফ্ল্যামিঙ্গো’র মতো সব ডোরাকাটা, রঙিন কোটের
চোরাগোপ্তা খেলে গেছে বিভিন্ন সূর্যের রঙে- স্বচ্ছ জলে খেয়েছে হুঁচোট
তাই তারা কুয়াশায় সন্দিহান অন্তরীপে হাঁটু গেড়ে ব্যালটের ভোট
সৃষ্টি ক’রে গিয়েছিল- গলা টিপে গিয়েছিল জীবাত্মার নেকটাই এঁটে
নিষ্করুণ ভাবে তারা করেছিল কামিজের সাথে তার লোককে চুনোট
সকলই কামিজ ভেবে- তবু এই এক চুল ভ্রান্তির বিপদে
তাদের বন্দর ভেঙে প’ড়ে গেল- তাদের নারীর মুণ্ড শেষ সন্তানের সাথে হ্রদে
খ’সে গেল- যেখানে অস্পষ্ট হ্রদ মিশে গেছে সমুদ্রের সাথে
পৃথিবীর শেষ শেল, ডিম, মাইল, জেপেলিন, জাহাজের ভিড়
সেখানে ফিরোজা সূর্যে ভাঙা থুতমির মতো- তিন-চার ইঞ্চি গভীর
সমস্ত নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্যের গোলাকার পরিধির গায়ে
বেবুনের শান্তিময় বড়ো কালো ছায়া তাকে ফিরায়ে দিয়েছে পুনরায়

এক দিন এই হ্রদ আর এই সমুদ্রকে পেরেছে বানাতে
নিসর্গ নিজের হাতে অন্ধ ভাবে- যেমন সে বেবুন’কে সৃষ্টি ক’রে তবে
লক্ষ-লক্ষ বৎসরের অল্পতায় ভেবেছিল: ও-রকম লেজুড় কি র’বে?
চাঁদের লণ্ঠনে ন’ড়ে ভেবেছিল;- ধূমকেতুদের মতো দীর্ঘ গাছের ভিতরে
বানরের উল্কা খেয়ে আরও কিছু সমীচীনতাকে যেন গ’ড়ে
নির্বিণ্ন জ্যোৎস্না, বালি, কুয়াশা ও সামুদ্রিক রেখা ভৃগুরেখা সব মিশে
কেননা সিন্ধুর নিচে পুরুভুজ বিছানার ‘পরে
অদ্ভুত মাছেরা সব লালসার গোল বল নিয়ে খেলা করে
নির্জন মদির গুল্ম জেগে ওঠে যেন কার অপরূপ মাথার মতন
তবুও তা মেরুদণ্ডহীন সব রঙিন সাপের ডিম, নীড়ের মতন অচেতন
তাই কেউ জেগে ছিল তার পর-
সদ্য কাঁচা ডিম দিয়ে মাজা এক শেমিজের মতন পালিশে
যদিও সে আজ রাতে পুনরায়, আহা,
সমুদ্রের স্পঞ্জের পরিকল্পনায় গেছে মিশে
ঢের নিচে সাগরের ষড়যন্ত্রহীন স্তব্ধ জলের ভিতরে
বন্দরের শেষ মানবীর স্তন একা-একা কথা ভেবে নড়ে
নিজের শরীর থেকে খ’সে গিয়ে ঢের দূরে গুল্ম হাড় ক্কাথে
লালসার বল সে-ও আপনার সন্তানের কঙ্কালের হাতে।