অনেক দেশের কথা ভাবা হত

অনেক দেশের কথা ভাবা হত।
কোথাও সিন্ধুর পারে- যেখানে স্তম্ভের ‘পরে ঋজু স্বাধীনতা
নারীর মতন এসে দাঁড়ায়েছে- এ-বার দাঁড়াতে হবে ব’লে।
ভোরের প্রখর রৌদ্রে চারি-দিকে ইয়াঙ্কি সিন্ধুর নীল জল।
এই ছবি ঢের দিন খেলা ক’রে গেছে মনে। রিরংসার থেকে
জীবনকে টেনে নিতে হল সেই নতুন ভূখণ্ডে
যেখানে নগরীগুলো অগণন দীর্ঘছন্দ ধবল নদীকে
আকাশের গায়ে তুলে স্থির ক’রে রেখে দিল- গ্যাজেবো’র মতো
তবুও সচ্ছল নদী রয়ে গেল, মানহাটান ফেনা- মিলউকি, মিসুরি’র

আশ্চর্য মেধাবী নামে স্বর্গ মাটি নরকের কানে
পুনরায় শব্দতরঙ্গের ক্ষুধা জেগে ওঠে- অকৃত্রিম
নদীর কিনারে- গুল্মে- বাবলা’র ছিপছিপে কুঞ্জের ভিতরে
অগণ্য হলুদ ফুল;
প্রেমিকের হৃদয়যন্ত্রের মতো ভোরের বাতাসে ন’ড়ে উঠে
নিকটেই মানুষের অভ্যুত্থান অনুভব ক’রে যায় তারা
সস্মিত জীবনে, রক্তে, সঙ্কল্পে,- ম্যাড্রিগাল’এ
মহাচিল’দের গানে-
সূর্যের আগুনে স্নিগ্ধ সুধীদের সমুদ্রে সেনেট’এ।

II
নিউইয়র্কার
আজ এই রাতের দুপুরে তুমি ক্ষমা ক’রো আমাকে, সময়
এখন ধূসর পথে বাতাসে বিম্বের মুখ দেখে
যদি কিছু দেখে থাকি- জ্ঞানময় আতুর পৃথিবী
যেই সব কক্ষ আজ বিঁধে রেখে দিয়েছে পেরেকে

মাংসাশী পাতায় শুভ্র সূর্যানুগ উদ্ভিদের মতো
মানুষেরও ক্ষুধা- শ্রদ্ধা- কৌতূহল রয়ে গেছে প্রাণে
যারা তাকে ভালোবাসে পুরুভুজ- অস্থি- নারী- পাললিক সমুদ্রের থেকে
প্রেমিক সে হতে পারে তাদের নির্জন অভিজ্ঞানে।

III
এই সব উপাসনা এক দিন ভালো লেগেছিল
তবুও নতুন ঘড়িযন্ত্রগুলো সব ক্রমশই চকচকে হয়ে ওঠে
সময়ের অতীত বুনুনি থেকে দীপ্তি পেয়ে
এক দিন অন্য সব বিবর্ণ নগরে ঘুরে বিস্মৃত পাথর ছুঁয়ে আমি
অনুভব ক’রে গেছি
নির্জন ভোরের বেলা সাঁচিস্তূপে- তোরণের ‘পরে
ধারাপুরী- মহাবলিপুর’এ সব উৎকীর্ণ ছবির ভিড়ে এসে
কিংবা লোষ্ট্রে- অথবা লোষ্ট্রের মতো নদীর জলের দিকে চেয়ে

বার্ষিক সুরের শব্দ নিভে যায় পৃথিবীর
অয়নরেখার ‘পরে উৎসারিত আহ্নিক ধ্বনি
প্রান্তরের পথে-পথে মলিন শল্কের সব সুদীর্ঘ বৃক্ষকে
জ্ঞানময় মনে হয়

গাছের বুকের ‘পরে হাত রেখে দিলে তার অগণন
বামন গোধিকাগুলো নিমেষেই আঁধার খোঁড়লে
লুপ্ত হয়; বাহিরের উত্তেজিত পৃথিবীর মনীষীরা সময় ও আধারকে আজ
মানুষ-মনের কেন্দ্রে নিয়ে এল।

সেই সব মানুষেরা এয়ারোড্রোমের থেকে নেমে
এইখানে গোধিকা’র দ্রুত লাফে পুরাতন জীর্ণতাকে টের পায়
গোধিকা’র স্তব্ধতায় পুরাতন মৃত্যুকে অনুভব করে।
আমিও সে-সব করি। তবুও নতুন শল্ক- নবতর মৃত্যু কোথায়?

আমাদের পূর্বপুরুষেরা কোন্ বাতাসের শব্দ শুনেছিল!

IV
কেউ-কেউ নগরীর পথে হেঁটে সারা-রাত
মনে হয় বায়ুর ভিতর থেকে যেই সব সিদ্ধাঙ্গনা এক দিন
অবতীর্ণ হয়েছিল আমাদের চোখের সমুখে শূন্য বিপথের মোড়ে
আমাদের পায়ে-চলা পথের পরিধি কেটে দিতে
হয়তো-বা কোনও এক বৈকুণ্ঠের দিকে
অথবা অকৃত্রিম নরকের পানে
হয়তো-বা মধ্যপৃথিবীর ধূর্ত গোলকধাঁধায়
আমাদের চোখের খোঁড়লে অগ্নি জ্বেলে দিয়ে গিয়েছিল তারা

আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছিল তবু
রেখে দিয়েছিল তারা এ-রকম অনুজ্ঞাপন
সারা-রাত নগরীর পথে হেঁটে- তবুও মানুষ
শয্যায় অতৃপ্তি পাবে।- রাত্রি আছে- ঘুমাবার কোনও লোক নেই।