অনেক জলের কাছে ব’সে

অনেক জলের কাছে ব’সে
চুপ ক’রে রয়েছে মেছো সে
দিয়েছে সে বগের মতন ঠ্যাঙ্ রেখে
বগের মতন ঠ্যাঙে

মাথার উপরে মেঘ পুরানো তামার মতো চলিতেছে ভেসে
বাবলার রোগা এক ডাল থেকে ফেঁসে
হলুদ ফুলের মতো দুপুরের বোলতারা নড়ে
কোথাও পাতার তলে চাকের উপরে
পুরানো গাছের ‘পরে পাখিদের ঠোঁটে
শক্ত আখরোট
খুটখুট করে
পুকুরের অবিরল জলের ভিতরে
তবু কারা আছে?
সে এক গভীর প্রশ্ন
উত্তর পায় নি তার কেউ কারও কাছে

কেবল দুইটি মাছ জানে
ছ’ বছর ধ’রে তারা একসাথে কাছে আছে-
তাহাদের শরীরের ঘ্রাণ
আকাশের- বাতাসের- পাতালের- পৃথিবীর সকল আহ্বান
গরম দুপুরে তারা দুই জনে চ’লে গেছে নদীর জলের
নিচের নরম মাটি- সেই পথ ধ’রে
পোটকা মাছের গ্রাস কেড়ে লয়ে- কুচো চিংড়ির ছায়ে পেট ভ’রে-ভ’রে
অরাজকি করিয়াছে ঢের
আমি তাহা পাই নাই- তুমি তাহা পাও নাই টের
বুড়োনো পুরোনো এক নৌকার কাছে চ’লে এসে
হঠাৎ পেয়েছে তারা ভয়
তারপর জেগেছে বিস্ময়
তবু তারপর
মাছের গলার থেকে তাহাদের বিস্ময়ের স্বর
শুনিয়াছে তারা পরস্পর
আজ তারা দুই জনে কাঁচির মতন ঠোঁট-
বকের ঠোঁটের থেকে বেঁচে
বোয়ালের তাড়া খেয়ে তিড়িবিড়ি নেচে
দুপুরের রোদ থেকে ছুটি নিয়ে আসিয়াছে নেমে এই খোপে
বোলতার এই ডিমে- বঁড়শির ডিমওয়ালা টোপে
আসিয়াছে তারা দুই জন
ফাতনা লাফায়ে ওঠে রবারের বলের মতন
জলের ভিতর থেকে কোথায় কে চ’লে গেল-
কোনও স্বাদ থাকে না ক’ তার
তারপর তুমি একা মাছ এক প’ড়ে আছ ঢের জলে-
ঝোপ থেকে ঝোপে তুমি চলিবে না আর?

চলিবে না না-কি তুমি নদীর জলের নিচে নরম মাটির পথ ধ’রে
পোটকা মাছের গ্রাস কেড়ে লয়ে কুচো চিংড়ির ছায়ে পেট ভ’রে-ভ’রে
চুরি ক’রে কাতলের গুলি-গুলি ডিমগুলো খেয়ে
মাছের শরীর দিয়ে ফলন্ত নদীর স্বাদ পেয়ে!