অতীব নিঃসক্ত পরিবার

এক বিচ্ছিন্ন- বড়ো- অতীব নিঃসক্ত পরিবার
সন্তানেরা পরস্পর থেকে ফাঁক হয়ে
ফাল্গুনের কলরবে জলের মতন
গিয়েছে যে যার দিকে বয়ে

জানি আমি- শুনেছি- অনেক বার তারা
মানুষের জীবনের কাজের তলব ভালোবেসে
পরের ঘরে মজুরি ক’রে তবু অপরকে প্রতিহত ক’রে
হারামি বলে নি অবশেষে

যাকে যাহা দেয় তাহা স্পষ্ট ভাবে দান ক’রে তবু
যেখানে যা নেয় তাহা তেমনই বিশ্বস্ত ভাবে নিয়ে
সম্রাট অথবা ভাঁড়- শ্যামশরণ নিজে
কাহারও রক্তিম মন্দ্রে (জোর পেয়ে) যায় নি হারিয়ে

স্বতই তবু তারা উত্তেজিত প্রাণ সব- ভাগাড়ে পিতার জঙ্ঘা থেকে সময়ের কোন
কী ক’রে-যে দলবলে জন্মেছিল- ভাবি
সাধারণ মানুষকে স্বভাবত হৃদয়ের সহোদর ভেবে
কী ক’রে জানায়েছিল অলোকসামান্য সব দাবি

নানা-রূপ সাদা মিঠে সমিতিতে গিয়ে
কিংবা জ্ঞানপাপে আজ যাহাদের চোখ থেকে নিভে গেছে জ্ঞান
তাহাদের কাছে গিয়ে সাধারণ প্রবঞ্চিত মানুষের প্রাণে আশা জাগে
অথবা অস্পষ্ট লোভে সাধারণ সর্বস্বান্ত মানুষের কান

দীর্ঘতর হয়ে যায়- অনুভব ক’রে নিয়ে তারা
গর্দভ পিটিয়ে রূপ বানাবার আগে ইতস্তত
মাঝ-পথে থেমে গেছে হৃদয়ের বকনা পিটিয়ে
যখনই মাথায় চ’ড়ে হয়ে গেছে স্লোগানের মতো

তাই তারা একটি কেন্দ্রের থেকে ফেঁসে নানা দিকে
যে যাহার নিজের আলোকে জ্ঞানবান
ক্রমেই নিমীল হতে হতে তবু উদ্বোধিত হয়ে
এক রৌদ্রে (কেটে ফেলে) এক কুড়ি সুগ্রীবের কান

কেটে ফেলে। এক জন করোমণ্ডলের কূলে বহু দিন থেকে
ছোবড়ার ব্যবসায়ে উপচায়ে চ’লে গেছে- আর এক জন চ’লে গেছে
বুয়েনোস আইরিসে- হয়তো এখন জাঞ্জিবারে
সেখানে রাজহাঁস দেখে লবঙ্গে ভিড়েছে

পার্বত্য-ত্রিপুরা থেকে উঠে গিয়ে অপরটি এক ঢিল দূরে
অবশেষে চ’লে গেছে টেরাই পর্বতে
সাধারণ বাজারের খোশ-খবরের রঙে ঘুরে
ঢের দূরে হঙকঙের পথে

অন্য দুই জন আজ-
সর্বদাই নীলাভ আলোক-রেখা এসে বাদ সাধে
না হলে ঘণ্টার রোলে এক দিন হেমন্ত-বিকেলে
একক ত্রিপুরে এসে পিতাদের স্তিমিত প্রাসাদে

তাহাদের কেউ-কেউ দেখা দিয়ে যেত
তবু তারা অপরের সন্তানের- সন্তানের সন্তানের তরে
পিতৃলোক গ’ড়ে যাবে সারসের মতো প্রেমে যদি
তবে তাহা বাস্তবিকই গড়ে

তার পর সহসা সজাগ হয়ে উঠে এক দিন
নাড়ি-নক্ষত্রের টানে শরতের নীলাভ বাতাসে
মানুষের আগা-গোড়া জীবনের অবলঙ্ নমুনার মতো
খামের টিকিটে নেমে আসে

বড়োটির মৃত্যু হল
মেজোটির মৃত্যু হয়ে গেছে তার পর
সেজো ভাই- আর সব সহোদর বেঁচে আছে তবু
(সকলেরই) পিলে ফেটে বার হয়ে গিয়েছে রগড়

‘একে-একে সকলেই ফেঁসে যায়’, বুড়ো বাপ বলে,
‘তাদের দেখি নি আমি কোনও দিন- তাহাদের মুখ থেকে কথা
কখনও নিজের কানে শুনেছি কি?
চারি-দিকে দেয়ালের মতো আজ তাদের ঘনিষ্ঠ নিস্তব্ধতা

অনুভব করি আমি- তাহাদের সব কথা ভেবে
ভোর হলে- বিকেলের রৌদ্র নেমে এলে।
মানুষের মৃত্যু হয়, নীরবতা স্বভাবত আসে
এ-সব সরল সত্য; তেমনই সহজ মনোভাবে ভুলে গেলে।’