পিতৃলোক

পিতৃলোক, তোমরা কি ভস্ম হয়ে গেছ দূরে সিরুলির শ্মশানের পারে?
অতখানি অগ্নি আর আলোকের কোথাও রয়েছে যেন
নক্ষত্রের মতো ব্যবহার
মৃত তারকারও থেকে নীহারিকা শূন্য পিঁজে জেগে ওঠে আর এক বার

আবার প্রসব হয় বৃহস্পতি নক্ষত্রের;- শেষ ভাঁড় গল্প ব’লে মিশে গেছে যখন আঁধারে
আমি জানি তোমরা কোথাও যেন রয়ে গেছ এই উপসাগরের কাছে
অথবা জাভার দিকে গভীর মেঘের রাতে চলিতেছে তোমাদের ক্ষোভের তরণী
বোরোবুদুরের কোনো মন্দিরের অন্ধকারে হয়তো পেঁচারা শোনে তোমাদের ধ্বনি

আমারই কানের কাছে অবিশ্বাস্য কৃচ্ছ্র কলরবে যেন কাদের সূচনা জেগে আছে
নির্জন রোমশ হাত তোমাদের আজও যেন দেবদারু কাঠ নিয়ে ছাঁচিতেছে হাঙরের মুখ
জীবনের ব্যাকরণ জেনে নেবে তারা কিমাকার সমাসকে ছিঁড়ে;
যেন তারা তবু মৃত- বই- নারী- আত্মা- সব নিয়ে যায় বিরুদ্ধ সমীরে;

গভীর বণিক তারা ছিল এই জীবনের- অনেক আশ্চর্য সাদা কড়ির চিবুক
নেপথ্যে নড়িতে আছে; মৃত শতাব্দীর থেকে আরও অন্ধ বধির শতকে
হাওয়ার দস্তানা প’রে প্রভাতের রৌদ্রে তারা চলিতেছে সারসের পাল
তবুও বিমুখ মোরা;- যুদ্ধ, রক্ত, জ্যামিতিক ঈশ্বর, মাকড়সা, মশার জঞ্জাল

আমাদের ঝুলি যেন ভ’রে দিল,- ক্লান্ত ইহুদির মতো জ্যোতির্ময় চাঁদনির চকে
চোরাবাজারের থেকে তবু ঠুলি চাই; না হলে চোখের শিরা পুড়ে যাবে রঙের বিদ্বেষে
এক-শো বছর ধ’রে তোমাদের স্মরণ করেছে এই পৃথিবীর দশকেরা, গাঢ় পিতৃলোক?
না- না। তবু তোমাদের সম্ভ্রম প্রাণে যেন ছিল অপার্থিব অন্যায় আলোক
আমাদের চোখ ঠার দিয়ে তারা গৈবি পুণ্য নিয়ে যায় নবতর শতাব্দীর দিকে নিরুদ্দেশে।