পরিপূর্ণ পৃথিবীর ইশারায়

আমি এই পরিপূর্ণ পৃথিবীর ইশারায় নেমে ঢের দিন
দেখেছি আকাশে সূর্য কী ক’রে মাঠের মাঝে একটি বৃক্ষকে
ছায়ার শরীরে কালো অকৃত্রিম ক’রে বুনে যায়
ধূসর মাটির ‘পরে কয়েকটি সাদা ছাগলের
শরীরের ‘পরে সব রোমশ পাখির মতো পাতার ছায়ারা
খেলে যায়। কারা সব? অথবা দেখেছি সূর্য আকাশের প্রান্তে কোথাও
নিজেকে লুকায়ে রেখে এক দিন প্রতিভাত হলে
সহসা জলের মুখে বিকেলের নদীর ভিতরে।
তার পর ধরা প’ড়ে গিয়েছিল
যদি একে ভুল বলে বিশীর্ণ বিশেষ ভুলে তত্ত্ববিদ
তবুও কবির মন সর্বদাই এই
দ্রুত উপচীয়মান নিসর্গের অন্তরঙ্গ জিনিসের মতো
সে-সব কালের সেই দিনগুলো এ-সব বিস্ময়ে
অভিভূত হয়ে যেত- তবুও হৃদয়ে সেই মেধা
নেই আর। অতীব সুসাময়িক বিজ্ঞানের হাত
সংশোধন ক’রে গেছে খানিকটা- মনে হয়- তবু পুনরায়
প্রান্তরের পথে হেঁটে ধূসর মাটির ‘পরে নুয়ে থেকে ভাবি
হয়তো হৃদয় শঠ- যদিও বিজ্ঞান অকপট
অথবা কপট নয়- যদিও নিসর্গ সত্য সাদা সাধারণ
মানুষের জ্ঞান থেকে উদ্বর্তিত হয়ে চির-কাল
নিজের নিয়মে হেসে- খেলে- জ্ব’লে- টিটকারি দিয়ে
আমাকে সে বানায়েছে নদীর মতন এক- নদীদের কাছে
নদীকে সে বানায়েছে ভোরবেলা পূর্ত বিভাগের
অথবা বিকেলবেলা আউটরাম ঘাটে- ডক’এ- ছেনালের চোখে
অথবা গভীর রাতে হাওড়ার পোলে এক ক্লিষ্ট সন্তানের
বিরক্ত আত্মার কাছে কতগুলো জলাকার শব্দের মতন
কতগুলো থুপ নিয়ে- নাম নিয়ে- এক-একটি নদী
পৃথিবীর আমাজন- মিসিসিপি- পদ্মা- কর্ণফুলি
টাইবার- টেমস- লিফি- জাম্বেলি- হোয়াংহো
কতগুলো থুপি, নাম, রক্ত, ধোঁয়া, জলের ভীষণ সমবায়
এবং এমন আরও ঢের কিছু। তবুও সে-সব জলগুলো
কাঠের পিপায় ক’রে সমাহৃত হতে পারে পৃথিবীর পথে
প্লাম্বারের নলে গিয়ে- অথবা পাইপে
ফায়ারব্রিগেডদের- মানুষের উদরের অন্ধকারে
তবুও সে-সব সাদা, স্বাদহীন পিচ্ছিলতা ছাড়া
কিছু নয়। সর্বদাই প্রবেশের পথ রয়ে গেছে
কোটি-কোটি নলের ভিতরে গিয়ে
অথবা প্রবেশ ক’রে পুনরায় বাহির হবার
কোটি-কোটি নলের ভিতর থেকে অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতায়
যখন সবের চেয়ে বেশি প্রয়োজন আসে আমার গেলাসে
অথবা স্টেশনে কিছু সাময়িক ঈষৎ মলিন
স্যানিটারি বাথরুমে; হিস- হিস- নির্ঝরের মতো শব্দ হয়
কেউ তাহা শোনে না ক’। আমি শুনি। আমার হৃদয়ে
কয়েকটি সহোদর অন্ধকারে মুখ ঢেকে বলে:
আমাদের কাছে জল- নদী- এ-রকম।
ঝুর-ঝুর শব্দ হয় বায়ুলোকে নির্ঝরের মতো
পৃথিবীর জড়বাদী দার্শনিক অজর বিজ্ঞান
কোথায় বাতাস, অগ্নি, সলিলকে কলের ভিতরে
রেখে দেবে? যদিও শঠতা নেই কারু- কেউ অনৃত নয়।
তবুও নদীই শঠ- পেঁচা’র মতন কুয়াশায়
কখনও পিছল পাখা নীরবে বহন করে ইঁদুরের তরে
কখনও-বা বালকের গাল খায় অন্ধকারে ব’সে
কখনও জৈমিনি তার কথা ভেবে তর্কের পরিধি
রাধাকৃষ্ণের হাতে তুলে দেয়- পরিধি তবুও
গোলাকার- কী নিয়মে তবুও কুঞ্চিত হয়ে ওঠে
সারমেয়দের লেজ সহজেই- আমাদেরও গাঢ় অনুভব?