পরম ভূতের আবির্ভাব

এখানে এখন কোনও পরম ভূতের আবির্ভাব
হয়তো-বা হতে পারে- হয়তো-বা হয়ে যেতে পারে
কেননা হেমন্ত-ঋতু আবার এসেছে অন্ধকারে
মানুষও পেয়েছে তার পরিচিত পুরোনো স্বভাব
এ-সব টেবিল- বই- আকাঙ্ক্ষার সংসর্গে এসে
এ-ঘরে মানুষ আমি নিজে
বহু দিন পৃথিবীর সূতির গেঞ্জিতে কামিজে
মনে হয় হঠাৎ বিরক্ত হয়ে একঘেয়ে স্থির একশেষে
নিজের নিঃসঙ্গ গরজেই
কামিজ রয়েছে বটে, তবু তাইতেই
ভিতরে মানুষ কেউ নেই।
এখন তা হলে খুব অবহিত হয়ে নিতে হয়।
এয়োরোড্রোমের থেকে দূরে
পিস্টনের মতো শব্দ শোনা যায় রাতের দুপুরে
তবুও তা পিস্টন নয়।
মাকড়ের জাল থেকে মেয়ে-তাঁতবুনুনি বলে
এক দিন লিখে গিয়েছিল বটে আদি অভিধান
এখন সে পেয়ে গেছে মমি’র সম্মান
আমার টেবিলে কিছু জল আছে ব’লে সেই অবিকল জলে।
(এমন নীরব রাতে) তাহার পিপাসা ক্রমে তুষের হাঁড়ির মতো ওঠে তেতে
তবুও ভড়কে যায় নিছক জলের দরে তেষ্টা মেটাতে।

বরং শীতল কোনও প্রেতাত্মাকে ডেকে
রাত্রিকে, ও তাঁতবুনুনি, তবে স্নিগ্ধ করা যাক
বেঁচে থেকে ভালোবেসেছিল যারা অম্বুরি তামাক
দেখেছে দু’-চার পেগ অতীব পুরোনো মদ চেখে
অথবা ঘোড়ার-ট্রামে চড়েছিল বেলোয়ারি রোদে
দেখে গিয়েছিল যারা মুর্গি’র লোচ্চা লড়াই
এ-রকম দু’-চারটে পুরাতন চাঁই
ম’রে-হেজে এত দিনে বিশোধিত হয়েছে আমোদে
তবুও হয়তো তারা ডান চোখ টিপে রেখে বাম চোখ দিয়ে
(কুকুরের ঘোড়দৌড় এখনও) ঘণ্টা-টাক দেখে যেত টিকিট ভাড়িয়ে।

এই সব অনুভব না ফুরুতে-ফুরুতেই কোল ঘেঁসে এত কাছে এগায়েছে তারা
কোথাও কুকুর আছে মনে ক’রে দিলে পরে (ভুল ক’রে) শিস
টেবিলের কান ঘেঁসে দেখা দেবে অদ্ভুত জিনিস
দাঁড়ায়েছে (ছিপছিপে) নলখাগড়ার মতো একহারা।
গোল হয়ে তারা সব দাঁড়ায়েছে এসে
পরস্পরকে তারা ভালো ক’রে জানে
কুমিল্লা ঢাকা হুগলি বাঁকুড়া বর্ধমান ছেড়ে দিয়ে শেষে
হাতছাড়া হয়ে গিয়ে যে যার ভিটেয় ঘুঘু চড়ে
ডাকের পায়রা’র মতো ভেবে নিতে-না-নিতেই গিয়েছিল উড়ে
কলকাতায় জন্মেছিল সব।
স্বপ্ন, স্বপ্ন। এখন বারীন সেন এসেছে করেছি অনুভব।

যদিও সে ম’রে গেছে আমার এ-কুকুরের ঠানদিদি বিয়োবার আগে
তবুও কুকুর তাকে চেনে
নিদেন খিদেয় জ্ব’লে পুরোনো জুতোর মতো বারীন’কে টেনে
এনে সে রসিয়ে খেয়ে নিতে চায় যত দিন লাগে
বারীন আন্ডারডগ ভালোবেসে গেছে বহু দিন
তবুও আমার সাথে শেষ দিকে হয়েছিল মন-কষাকষি
সেই সব মৃত পোলিটিকস আজ- তবুও সুদীর্ঘ এক রশি
আমাকে এ-দিকে পেলে অফ-সাইডার- স্বভাবত ও-দিকে বারীন
রয়ে যাবে অনুভব ক’রে ইহা ধরি মাঝে-মাঝে- তবু সেই রশি
হাতালে ও-দিক থেকে খিঁচে টান মেরেছে প্রেয়সী
পৃথিবীতে ঢের দিন বেঁচে থেকে- (তবুও) অন্যায় কথা ঢের
উচ্চারণ ক’রে গেছি- বেশি ক’রে গেছি উচ্চারণ।
এই সব অনুভাব নিয়ে আজ মনের মতন
শখের যাত্রা কেউ খোলে যদি- তাতে কি একটি পার্ট র’বে না ভূতের?
পৃথিবীতে কিছু দিন বেঁচে থেকে- পরলোকে কিছু দিন বেঁচে
তুলাদণ্ডে কোন দিক হতে পারে ভারি
এ-সব জিজ্ঞাসা এসে অত্যন্ত চঞ্চল ক’রে গিয়েছিল নাড়ি
এক দিন বারীনের- কোনওই উত্তর তবু পায় নি সে এঁচে
ধোপার কাপড় প’রে, নুন খেয়ে, গুলি খেয়ে, ঘুণ ধ’রে গিয়েছিল হাড়ে
তাই সে কাপড় ছেড়ে তবুও উলঙ্গ নয় নিজের ভীষণ অহঙ্কারে।