প্রান্তরের অন্ধকারে

এইখানে প্রান্তরের অন্ধকারে দাঁড়ায়েছি এসে
মধ্যনিশীথের এই আসন্ন তারকাদের সঙ্গ ভালোবেসে
তবুও ভাঁড়ের মতো- হাসির খাবার পেয়ে কঙ্কালের জঙ্ ওঠে কেশে

মরখুটে ঘোড়া ঐ ঘাস খায়- ঘাড়ে তার ঘায়ের উপরে
বিনবিনে ডাঁশগুলো শিশিরের মতো শব্দ করে
এই স্থান হ্রদ আর বরফের মতো সাদা ঘোড়াদের তরে

ছিল তবু এক-দিন; র’বে তবু এক-দিন; হে কালপুরুষ, ধ্রুব স্বাতী, শতভিষা
উচ্ছৃঙ্খল প্রবাহের মতো যারা তাহাদের দিশা
স্থির করে কর্ণধার- ভূতকে নিরস্ত করে প্রশান্ত সরিষা

ভূপৃষ্ঠের ঐ দিকে- জানি আমি- আবার নতুন বেবিলন
উঠেছে অনেক দূর- শোনা যায় কর্নিশে সিংহের গর্জন
হয়তো-বা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এত রাতে ময়ূরবাহন।

এই দিকে বিকলাঙ্গ নদীটির থেকে সাত-পাঁচ ধনু দূরে
মানুষ এখনও নীল, আদিম সাপুড়ে
রক্ত আর মৃত্যু ছাড়া কিছু পায় না ক’ তারা মাটি খুঁড়ে।

এখানে শিশির ঝরে সময়বিন্দুর মতো নক্ষত্রের থেকে
এ-দেশ মালয়, বালি, শ্যাম, ইন্দোচীন
এই দিকে (এই দেশ) স্বর্গ নরকের চোখে চির-কাল সম-ভাবে বিবেচনাধীন
অসমাপ্ত কুয়াশার আবরণ থেকে সাদা চোখ তুলে দেখেছে অনপনেয় কুহুলিন

এই সব শেষ হয়ে যাবে তবু এক-দিন- হয়তো-বা তীক্ষ্ণ ইতিহাস
শানিত সাপের মতো অন্ধকারে নিজেরে করেছে প্রায় গ্রাস।
ক্রমে এক নিস্তব্ধতা- নীলাভ ঘাসের ফুলে সৃষ্টির বিন্যাস

আমাদের হৃদয়কে ক্রমেই নীরব হতে বলে
যে-টেবিলে মাঝরাতে দার্শনিকদের মোম রাষ্ট্রভাষাভাষীর দখলে
সে-সব থামায়ে ফেলে (হাতের আয়ুর রেখা) তারকার উদাত্ত অনলে

হাতের আয়ুর রেখা আমাদের সেই সব রাষ্ট্রভাষা শিখে- তবু-
জ্ব’লে ওঠে অন্ধকারে ভৌতিক মুখের মতন
মাথার সকল চুল হয়ে যায় ধূসর- ধূসরতম শন
লোষ্ট্র, আমি, জীব আর তারকার দেহ মিশে পায় এক প্রিয় পরিজন

বিদূষক বামনের মতো হেসে শত-শতাব্দীর পথে এক বার চায় শুধু হৃদয় জুড়াতে
ফুরফুরে আগুনের থান তবু কাঁচিছাঁটা জামার মতন মুক্ত হাতে
তাহার নগ্নতা ঘিরে জ্ব’লে যায়- সে কোথাও পারে না দাঁড়াতে।