প্রাসাদের অরণ্যের মাঝখানে

প্রাসাদের অরণ্যের মাঝখানে ইতস্তত ধোঁয়ার কুণ্ডলী
আকাশে সর্পিত হয়ে উঠে যায়- আজ এই অমর পৃথিবী
তাদের চোলাই থেকে কেবলই শুশ্রূষা পায়- জেনে-
নিকটে নদীর রেখা রয়ে গেছে-
আপনার ঈষৎ হলুদ্বর্ণ চোখের ভিতরে
নগরীর পরিধিকে রেখেছে তিসি’র বীজে ধ’রে
সেখানে তাকালে পরে বোঝা যায় (আহা)
এক দানবীর পিছে সাত জন বামনের সক্রিয়তা সততই ঘোরে।

নগরীর উঁচু স্তম্ভে রয়েছে নিসর্গ স্তব্ধ হয়ে
কখনও থামকে শঠ দেবদারু ব’লে মনে হয়।
তোরণে খোদিত আছে অশোকের শাখা পাতা ফুল
মালাক্কার আঞ্জিরের মতন বিস্ময়
সেইখানে ধ্যানী শিম্পাঞ্জির হাতে স্থির হয়ে থাকে
পৃথিবীর শ্যাম পরথুপি ঘাস- কানসোনা ঘাস
তুষের মতন ধূম্র সেই সব খিলানের গায়ে
রয়েছে উত্তীর্ণ হয়ে- প্রান্তরের গুড়ি-পথ দিয়ে
কোনও এক যাযাবর ইহুদির চির-কাল ভ্রমণের তরে
(চির-কাল)- মাথার উপরে তার সূর্য, স্বাতী, জলসর্প, সরমার ভিড়
দুই দিকে মুখখামুখি দু’টো ক্যাম্প
পোয়ালু ও জেরির শিবির
কিংবা আরও স্মরণীয় দ্বৈত রূপ নিজেদের স্বতন্ত্র আগুনে
ব’সে আছে- ইঞ্চি-ইঞ্চি ভূস্তরের চুনে
খ’সে গিয়ে- হয়তো-বা মিশে গেছে বায়ুর বেলুনে

নীরবে তাকালে সব প্রণাটন দেখা যায়- ক্রমে-
থামের পিছনে থামে- তোরণের ও-পাশে তোরণে
প্লিওসিন পৃথিবীর থেকে ক্রমে শুরু ক’রে- আজই
যে-সব অদৃশ্য বায়ু বিগলিত হয়ে গেল জলে
যে-সব ধূসর জল রক্তিম কঙ্কর হয়ে ক’রে গেছে নিজেদের কাজ
(বুঝে গেছে)- অথবা কী ক’রে আরও কেলাসিত হয়েছিল মানবসমাজ
ঘড়ি ধ’রে কয়েক মুহূর্ত ঘুরে
অথবা অনেক দিন ঘুরে-ঘুরে একা
তাহাদের সাথে শঠ হৃদয়ের পরিচয় হয়ে যায়
যেমন অ্যামিবাদের দেখা যায় পাললিক মলের ভিতরে- আজও-
সূর্যের আলোর বিম্বে ধরা পড়ে সেই সব মাতৃলোকরেখা
অথবা অনেক লক্ষ দ্বার পার হয়ে গেলে অনুভাবনায়
নাগার্জুনের সাথে তাহাদের মুখোমুখি দেখা
হয় না কি?-
ক্ষুব্ধ সমুদ্রের নিচে- অন্ধকারে- পুরুভুজদের সিঁড়ি বেয়ে
অনুভব করা যায়
মনীষীকে অনুভব করেছিল লক্ষ যুগ তারা
আমাকেও স্থির ভাবে অনুভব ক’রে এই সন্তপ্ত নগরী
রয়েছে বিচিত্র গোল শিশ্ন উদরের থেকে চেয়ে।

II
তবুও হৃদয় বলে: এই সব মস্তিষ্কের ভুল
দু’-মুখো সাপের মতো মস্তক নিজেকে গ্রাস ক’রে
বহু দুর অগ্রসর হয়ে গেছে-
আলোকবর্ষের মতো ন্যূব্জ বৃত্তাভাসের সঙ্কেতে
পুনরায় ফিরে আসে ভুল ক’রে তবু এক চুল-

Ill
এখানে তাকায়ে দেখ- বাতাসে ধর্মের কল ন’ড়ে যায় ধীরে
ধূম্র পরচুলা ধীরে রেখে দিয়ে ধর্ম-অর্থ-চিন্তা-অবতার
নিজের চেয়ারে ব’সে আপনার ঘরে
কর্নিসের দিকে চায়- মাকড়সা ঊর্ণাজাল গড়ে
সময় নিজেকে খেয়ে রয়ে যায় মণিবন্ধে ঘড়ির ভিতরে
কোথায় প্রসাদ তবে- যেইখানে বিশ্লেষণ নেই?
কোথায় প্রণয় তবে- যেইখানে মানুষের শরীরের ক্ষার
পাভলোভ- মার্কস- শেলি- পতঞ্জলি’কে
বিভিন্ন রুচির জীব জেনে নিয়ে- তবে
শালগম- মুলো- ঘাস- বিনফুল ছাড়া ‘প্রেম’ ‘প্রণয়ে’র নামায়নে প্রকাশিত হবে?

এ-রকম অনুধ্যান ক’রে বিচারক
নগ্ন ক’রে রেখে দেয় আপনার গোধিকার ত্বক
বাথরুমে- বহু দূর অবলঙ্ জলের ভিতরে
যাবৎ-না নিজেদের দুই জোড়া কান
সমধিক লম্বমান হয়ে সেই জলে এসে পড়ে।

IV
এইখানে পৃথিবীর মানুষের ভিড় হেঁটে যায়
নানা দিকে দোকানের কাঁচের জানালা
আগুলফলম্বিত সব বিদ্যুতের ইন্দ্রিয় মেলে
নগরীকে বড়ো অরণ্যের মতো রেখে গেছে জ্বেলে
কেউ ভাবে: স্ফিংক্স আমি
আমি পার্সিমন
কারু গায়ে বাঘিনির মতো কালো ডোরা
লক্ষ মৃত নক্ষত্রের বিম্বময় শাল এক-জোড়া
চিতার ক্ষুধিত গায়ে- চলেছে সে বায়ুর ভিতরে
কখনও-বা গৃহিণীর- কখনও-বা হরিণীর তরে
কার মুখ আধো-অন্ধকারে যেন মনে হয়- হেয়
সরমার ছেলে তারা হয়তো-বা-
বিভিন্ন আঁশের সারমেয়
বজেটের হাড় খেয়ে দল বেঁধে ভিন্ন-ভিন্ন মুখে
সর্বদাই চ’লে যায়- অবলীলাক্রমে অপনেয় নানা মনের অসুখে
সর্বদাই পথে-পথে তাহাদের শব-
ব্ৰহ্মা’র পরমায়ু পেয়ে গেলে আনুপূর্বিক
হয়তো-বা সেধে যেত ব্রহ্মাণ্ডের বিখ্যাত বিপ্লব
এখন মংগ্রেল- বাঘা- হুইপেট- হাউন্ড্
ঘেয়ো- বেওয়ারিশ- পাই- পারিয়ার মতো তারা জঙ্গলের পথে
ক্বচিৎ প্রবেশ করে-
তাহাদের জন্ম-মৃত্যু অন্য এক বিশদ জগতে।

সাদা খরগোশগুলো মনে করে আমরাই ম্লান খরগোশ
নদীর কিনারে গিয়ে সমাশ্রয় খুঁজে
তাদের হৃদয়ে তবু বেঁচে থাকে মনের অমর মুদ্রাদোষ
মনে করে আমরাই ভীত
বিশীর্ণ উদ্ভিদ দেখে- ম্লান হয় পুনরায়
খাদ্য যেন তাহাদের উদরকে খায়
খরগোশ-ঘরণী কিংবা গণিকার দিকে
ঘাসের ভিতরে তারা নিমেষেই হয় অন্তর্হিত
যেন কোনও প্রেমিকের সাধ
কিংবা কোনও মনীষীর আত্মপ্রসাদ
শশক: তৃণের গুচ্ছে রয়ে গেছে ভেবে
নীলাভ তৃণের ফুলে আবিষ্কার ক’রে গেল ভয়- পুনরায়
সব-চেয়ে চতুরাস্র বিপদের ফাঁদ
তাহাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে ভয়ে হিম হয়ে গেল আকাশের চাঁদ
কেউ ভাবে: স্ফিংক্স আমি
আমি জাগুয়ার
এক দ্বার দিয়ে ঢুকি- সর্বদাই অন্য এক দ্বার
রয়ে গেছে পুনঃপুনঃ উদয়ের
পুনরায় নিষ্ক্রান্ত হবার।