পৃথিবী, জীবন, সময়

কোথায় সে যে রয়েছিলাম-

আজকে মনে হয়
সাগর দ্যাখে আরো বৃহৎ আলো
দেখেছিলাম,- ঠিক তা সাগর নয়।

প্রশান্ত না কৃষ্ণ বেরিং ভূমধ্যলীন ভারত মেরুসাগর তাকে বলে
সেইখানেতে ভোরের হাওয়ায় শাদা ঘোড়ার ভিড়ে
একটি ঘোড়া সূর্য হ’য়ে জ্বলে
নীল আকাশের এপার থেকে ওপার যাবার পথে;
সুদর্শনা, সেই নীলিমা তোমার আকাশ ছিলো;
মনে প’ড়ে মাছের ঝাঁকে গহন সাগরজল,
ফেনার হাওয়ায় ফসকে শাদা পাখিগুলো দুরন্ত উজ্জ্বল
নীল কি রৌদ্র? রৌদ্র কি নীল জলের কোলাহল!

গভীর স্বনন; কান পেতে সেই সুর
মনে হতো এই পৃথিবীর অনেক পরের যেন
জাতক পৃথিবীটির মতন দূর;-
আজকে তোমার ইচ্ছা চিন্তা শপথ আর-এক রকম সুদর্শনা,
ধুলোকণা এখন আমি- কালের জলকল্লোলে জলকণা।

মনে প’ড়ে সেই কবেকার গভীর সাগর কী এক নিখিল বৃক্ষ থেকে ঝরে,
অন্ধকে চোখ দান করে রোদ ক্রন্দসীতে ব্যাপ্ত হ’য়ে পড়ে;
দুপুরবেলা সূর্যালোকের থেকে নেমে অতিথিদের মতো
অসংখ্য সব শাদা পাখি সহসা ঘুম ভেঙে
দিয়েছে ব’লে মনে হত;-
সাগর আলো পাখি নীরব চারিদিকে- বৃক্ষে নির্জনতা;
কে যেন ডেকে নিত আমায়
কে যেন ডেকে নিত তোমার কাছে,
সে যেন ডানা টিউব-ট্রেন রাডার-প্লেন টেলিপ্যাথির গতি
ছাড়িয়ে নীল আকাশে এসে নীল আকাশের নিজের পরিণতি।

মাঝে-মাঝে পাখির মতন
শিশির ঝরার শব্দ- বিকেল;
আলোও নিজে কেমন যেন অন্ধকারের মতো।
সময় এসে আমার কাছে একটি কথা জানতে চেয়েছিলো,
তোমার কাছে একটি কথার মানে;
আমরা দু’জন দু’-দৃষ্টিকোণ দিতাম তাকে হেসে
একটি শরীর হতাম পরস্পরকে ভালোবেসে।

এ-সব অনেক আগের কথা- অনেক চিহ্ন চিন্তা রীতির ক্ষয়
হ’য়ে গেছে তারপরেতে- মানুষকে সব বুঝে নিতে হয়।
কোথায় এখন সে সব আকাশ নক্ষত্র রোদ সত্য উজ্জ্বলতা:
পাখির সাথে মহাপ্রাণের বৃক্ষে পাখির কথা!
এসো জাগো হৃদয়, তুমি বিষয় জেনেছিলে;
গিয়েছিলে অনেক দূরে স্থির বিষয়ের দিকে;
সে সব আলোয় গ্রহণ করো আরেকরকম ব্যবহারের মানবপৃথিবীকে।

গণবার্তা। শারদীয় ১৩৫৮