পৃথিবীর পথে

তোমাদের দেখেছি সুন্দর আমি এক দিন পৃথিবীর পথে
সূর্যালোকের মতো বড়ো এক সাগরের কাছে।
তিনটি আলোকস্তম্ভ সেইখানে দূরে- দূরে সমুদ্রের জলে
মনে হত রাত্রিকে চায় না আর কোনও দিন
আমাদেরও আয়ু ক্ৰমে শুরু হত পৃথিবীর চেয়ে আরও বড়ো ভূমিকায় রোজ
বেগুন-ফুলের মতো নীল, বিবেচনাধীন এক ভোরের আকাশে
প্রভাতের। শেষ হয়ে যেত। যেন এই পৃথিবীতে সূর্য ছাড়া কেউ নাই
আমাদের পায়ের চারণভূমি মাটি নয়; যেন স্থির
বোম্বাইয়ের সাগরের লেজেন্ডারি মাঝিদের প্লুত পাল
মোটরবোটের স্ফূর্তি আমাদের চেয়ে কিছু তুচ্ছতর
হৃদয়ের সততায় যখন মানুষ তার ডানা পায়
ধবল চিলের মতো- তখন তাহার সেই রৌদ্র-সাদা বেলা
পালকের চেয়ে স্বচ্ছ- সমুদ্রের প্লুমেটের চেয়েও গভীর

তবুও অঘ্রান আরও গভীর- গভীরতর-
শস্যহীন খেত- শীর্ণ বাংলা’র মাঠ- ক্বাথ-
বড়ো, গোল, মৃত তার চাঁদের মতন
রয়ে গেছে সেতু এক- নীরব- অমেয়- নিরক্ষর
সকলের তরে নয়। আমিও বিস্মিত হয়ে ভাবিতাম এক দিন
তোমাদের জন্য নয়। স্বর্গ আর নিরয়ের মাঝখানে কোথাও ধূসর
বিকেলের পড়ন্ত রোদের পথে পায়চারি ক’রে যদি এক দিন
কানাকড়িহীন শূন্য কৃষাণের উলঙ্গ মুণ্ডের পিছে তোমাদের
ময়ূর-গর্বিত মুখ দেখা যায়, তা হলে ব্রহ্মা’ও নিজে
তিন বার চোখ মুছে চেয়ে দেখে এই সব
আশ্চর্য, গভীর, সাদা ভূতদের মুখের বিবরে- মুখে।
ধূর্ত জ্যোৎস্না ফিরে যায় প্রতিহত হয়ে।

তবুও তোমরা আজ দাঁড়ায়েছ এইখানে
ফিরোজা সূর্যের মতো- পশ্চিমের
সমুদ্রের চেয়ে আরও বড়ো শঠতায় সময়কে ফাঁকি দিয়ে
হে সুদূর সমুদ্রের পাখি-নারী দুই জন,
বাংলা’র এই কীর্ণ নঙর্থক মাঠের তরঙ্গে তবু,
তোমাদের দেহ হতে আঁশের আমিষ ঘ্রাণ আজ
স্থবিরতা। সমুদ্রের সুর যেন অবশেষে মুক্তি পেয়ে গেল
গেলাসের জলে এসে- যেমন নিখিল প্রাণ পেল
ব্রহ্মা’র বররুচি ডিমের ভিতরে এক দিন।