পৃথিবীর পথে এসে

পৃথিবীর পথে এসে হয়তো-বা ঠুলি-আঁটা জন্তুর মতন
ঘুরেছি ঘানিতে আমি- আমার ও সাধারণ সব সৃজনের
সাধারণ সুবিধার পথটুকু কেটে নিতে গিয়ে, আহা
যখন সর্বদা এই অত্যধিক অধীর পৃথিবী
মানুষের মুহূর্তের অবসর, অন্যমনস্কতাকে
ঈর্ষা করে- সর্বদা হৃদয় খুঁড়ে ভাবনার জাল
বুনে দিয়ে চ’লে যায়- সর্বদাই মাথার উপরে শুষ্ক চুলে
জন্তুর মতন শিং আবিষ্কার ক’রে নিয়ে- মানুষের মূঢ় প্রতিভাকে
রাজপথে- রক্তপথে- অষ্টাদশ শতকের বারিকের ভিড়ে
রঙিন খনির দিকে- কালো অটোমোবাইলের
স্ট্রিমলাইনে- (কোচ-ফ্যাক্টরিতে)- অথবা তোপের শব্দে টেনে
ধূমাময় ক’রে রাখে বুর্জোয়ার- পেটি-বুর্জোয়ার
অথবা অধিকতর অধমের অন্ধকার অববাহিকায়
দু’-এক মুহূর্ত তবু- কোনও দিন অবসর পেয়ে গেলে আমি
রাত না ফুরায়ে যেতে অনুভব ক’রে গেছি আলো।
হয়তো শরীরে কোনও গোপনীয় সন্ধিস্থলে- নাড়ি
আবিষ্টের মতো থেকে বহু দিন- তার পর আড়
ভেঙে গেছে- মানুষের সব স্নায়ু- স্নায়বিকতাকে
সহসা চারায়ে গেছে নির্ঝরের মতো
অবসর এল ব’লে- সাদা-কালো ডোরা-কাটা অমেয় শেমিজে
সকলের চেয়ে আগে জেগে উঠে প্রলেটেরিয়ান
প্রথম দোয়েল কোনও পোকা পাবে ব’লে
ঘাসের ভিতর থেকে ডেকে গেছে- আমার মাথার
পিঙ্গল স্বপ্নের ডোম চূর্ণ ক’রে ফেলে দিয়ে
প্রথম জলের দিকে- নদীর জলের দিকে- শিশিরের
ধূসর সাটিনে ধরা প’ড়ে গিয়ে- তবু তার পর
তবু সব অপস্রিয়মান গোল নক্ষত্রের দিকে
কোথায় সে উড়ে গেছে- আধেক বিস্ময়ে
পাখিকে নির্ণয় ক’রে নিতে গিয়ে দেখি
আমাকে সে সচকিত ক’রে দেয় কৃমির নিকটে
রাত্রির ঘাসে ভেজা ধুলোর ভিতরে এক নীল ফড়িঙের
শরীরের অনেক করুণ কারুশিল্পরেখাগুলো
তার হাতে হিম হয়ে গেছে এই টানাপোড়েনের
(হেমন্তের সারবান ভোরে, আহা)
বিব্রত ভোরের বেলা- ভয়াবহ নিরভিসন্ধির
অপরূপ অবতার হয়ে তবু পাখি
সকলই ফেলেছে ছিঁড়ে- যদি কোনও ডানপিটে ছেলে
এখুনি গুলতি-হাতে দু’-চারটে বুলবুল মেরে
সূর্য, আকাশ, বায়ু, ক্ষিতিজ রেখার গোলপথ
কালো, নীল ক’রে দেয়- সেই সব কালিমার পরে
রোদের জিনিস চুপে ঢেলে দিয়ে- অমেয় রোদের
সমস্ত সুদীর্ঘ দিন তাতে এই প্রান্তরের পথে
আমার ছায়ার পিছে নিঃসময় বগলেস-হীন
কুকুরের মতো ঘুরে তবুও হৃদয় বলে: সম্মুখে মনিব
চ’লে যায়- সবই ভালো- যত দূর সে-ও যাবে তুমিও তো যাবে।