প্রবীণ পরিধি

পুনরায় প্রবীণ পরিধি ভালো লেগে গেল- বিশৃঙ্খল অন্ধকারে থেমে
যেই যবনিকা নড়ে, তবুও নিজেকে উন্মোচন
করে নাই- নরনারীপুস্তকের দেশে ফেরে ধূসর মানুষ
তাহার নিকটে ব’সে হয়ে থাকে স্বতই নির্জন

নানা দেশে অতীতের সহৃদয় গভীর বাতাস
নানা রূপ তুষ, সাদা, ধূসর রঙের লোষ্ট্র পাথরের ঘ্রাণ
যে-সব ছাত্ররা চুপে ছাগলের চামড়ার থেকে
পার্চমেন্ট বার ক’রে রেখে দিত মোমের আলোকে অর্থবান

কিংবা শুক্র-তারকায় মেহগিনি-গাছের খোঁড়লে
মক্ষিকার পিরামিডে মলিন জন্তুর মতো যখন ঘুমায়ে
এক জন মানুষের দেহ থেকে ছায়া
ন’ড়ে যায় দেয়ালের গায়ে

দেহের সমুখে তার আগুন রয়েছে
চার-দিকে চারখানা ধূসর দেয়াল
সংরক্ষিত হতে পারে মানুষের চিন্তার নিয়মে
মাথার উপরে তার বুরুজের মতো ধূর্ত চাল

খানিকটা ফেটে গেছে- সময়কে গ্রাস ক’রে নিতে গিয়ে ক্রমে
নানা রূপ সরীসৃপ রেখার মতন
এঁকেবেঁকে নিজের বিশদ নাভিমূলে ফিরে এসে
সময়কে পুনরায় ক’রে নেয় গলাধঃকরণ

এই সব দৃশ্যে ঘুরে- সময়ের প্রয়োজন রয়ে গেছে আরও
ব্ৰহ্মা’র মতন আয়ু পেত যদি রাডাম্যানথাস, কচ, নল, দরায়ুস
তা হলে তাদের সব বিশৃঙ্খল উদ্ভিদের মতো জাল থেকে
জন্ম নিত অবশেষে এক দিন নিবিড় মানুষ।

তিন বার তিন ধনু বড়ো এক প্রান্তরের সীমা
একটি বিশীর্ণ নদী- জীর্ণ সেতু- ধূসর প্রাসাদ
কয়েকটি উঁচু গাছ দিকে-দিকে
যেইখানে পেচকেরা কুলায়ের ছাদ

নীরবে গঠন করে জ্যোৎস্নার রৌদ্রের ভিতরে
জীবনের তিন মান ভালো ক’রে জেনে
দু’-একটা পাখি তবু থেকে যায়- মানুষের অগোচর
চতুর্বিস্তারময় দুয়ারকে এনে

এই সব চাই আমি-
মানমন্দিরের মতো এক নির্জন পাথরের ঘর
তবুও তা কৃষকের গৃহ যেন
পিঙ্গল-রঙের স্তব্ধ গম্বুজের পর

পুরাতন পৃথিবীর বিখ্যাত খড়ের আচ্ছাদন
নিকটে প্রবীণ সেতু জীর্ণতর হয়ে আসে নদীর উপরে
অনেক মানুষ দেশ ক্রমেলক হয়ে চুপে সূচের ছেঁদায়
ঢুকে গেলে অপরূপ অবলীলাভরে

তবু সেই পুল ক্রমে সময়ের গ্রাসে
অধিক ধূসরতর হয়ে থাকে নিজের নিয়মে
বিশ্বস্ত নদীর জল উলুখড়ে হোগলা’র খেতের ভিতরে
শালিখের শঙ্কের মতো ম্লান হয়ে আসে ক্রমে

নিকটে সুদীর্ঘ ছায়া জাদু হয়ে মিশে গেছে বিষুবরেখায়
কখনও-বা জাদু ভেঙে লেগে আছে দেয়ালের গায়ে;
কয়েকটি বীতরাগ শাল্মলী’র শরীরের ছায়া;
প্রশাখার হাড়গোড় নক্ষত্র জড়ায়ে

কয়েকটি চিল আর টিট্টিভের তরে
বিংশতি বাতাস ক্রমে তাহাদের হাঁ-করা খোঁড়লে
নিজেদের বাসনায় খেলে গেলে পেচকী’র কাছে
গম্ভীর পেচক ধীরে রূপকের মতো গল্পচ্ছলে

বিস্ফারিত কথা বলে পৃথিবীর- সমুদ্রের- অগ্নি- আকাশের
নাক-কান-লেজ কাটা ঢের প্রেমিকের
যাবৎ-না নিজের দেয়াল থেকে নত হয়ে ব্রহ্মা শুনে যায়
আপনার ব্রহ্মাণ্ডকে পেয়ে যায় টের

এই সব পাই আমি-
চোখের অসুখে মৃত মাংসের পুরোনো প্রাঙ্গণ
প’ড়ে আছে- ছুরির মতন তীক্ষ্ণ ছিপছিপে ঘাস- নীল ফুল
সেইখানে নিজেদের কালাতিপাতের প্রয়োজন

অনুভব ক’রে যায়- নিসর্গের প্রবীণ প্রথায়
কাহারও উজ্জ্বল কাস্তে রাক্ষুসে উদ্ভিদ কেটে করে ঝিকমিক
অথবা বৃষ্টির শব্দ শোনা যায়
অথবা গ্রন্থের সব পরিচ্ছদে নানা রূপ দুরূহ প্রতীক

মানুষকে স্তব্ধ ক’রে রেখে দেয়
ব্রহ্মা’র বররুচি ডিমের ভিতরে
যদি না আশ্চর্য, সাদা গম্ভীর সমুদ্রপাখি এসে
ডিম নিয়ে উড়ে যায় অজাত মানুষ দেশ সময়ান্তরে।