প্রকৃতি শুধায় ডেকে

প্রকৃতি শুধায় ডেকে তাহাদের: এ-পথ ধরেছ কেন, আহা
গভীর ট্রামের শব্দে সেই প্রশ্ন ডুবে যায়
রাশি-রাশি ধুলো আর খোসা ধোঁয়া উড়ে এসে সেই প্রশ্ন গিলে ফেলে
মাঘশেষে কোনও এক একাদশী জ্যোৎস্নায় যখন প্রথম আসে ফাল্গুনের হাওয়া
তাহাদের কানের পটহে গোলদিঘি-তরুদের পল্লবেরা ধ্বনিত হয় না কিছু
মাথায় গাধার টুপি: কোনও এক নিরন্ন বামন যেন বলিতেছে: প্রবেশ নিষেধ
অদ্ভুত বামন এই দিতেছে পাহারা চুপে তাহাদের হৃদয়ের গুপ্ত কক্ষে ব’সে
তাই তারা শহরের দেয়ালের সব হ্যান্ডবিল চোখের খোঁড়ল দিয়ে প’ড়ে
যত দিন আলো আছে চোখে হ্যান্ডবিল প’ড়ে যাবে:
সিনেমার- সার্কাসের- খাঁটি দুধ- গনোরিয়া- ওষুধের
তাহাদের গোঁফ যেন স্তব্ধ গোবি-মরুভূর ঘাস: কবে-যে গজায়েছিল
ব্যারিস্টার চাটুজ্যের টবে ঢের চিনেবাঁশ- চাইনিজ পাম- মেইডেন হেয়ার-
মনে হয় যেন এক ছেলেবেলাকার প্রান্তরে অনেক নীল ঘাসফুল।
হে বামন, গোলদিঘি থেকে তুমি খানিকটা জলের আনন্দ এই সব মানুষের
মৃত গোঁফে ছড়াবে না?-
শহরের একাদশী চাঁদ,
যখন ড্রইংরুমে গুঞ্জন নাই ক’ আর, শেষ চকোলেট আর সিগারেট
উড়ে গেছে দূর স্বর্গে লামাদের মতো
‘ওঁ মণিপদ্মে হুম’ মন্ত্র সেধেছিল সারা-দিন আদালতে অফিসে ব্যাঙ্কে
তার পর মখমল পর্দা এল, মৈথুন, ঘুম, নিস্তব্ধতা
ফুটপাথে ভেজিটেবেলের জুতো, জুতোহীন পায়ের গোড়ালিগুলো কী চায় এখন
সমস্ত সলিল নিয়ে গোলদিঘি হবে না কি কোনও এক বনিতার মন
জল চাই: জলের আজানু ছুঁয়ে কালো চুল- জলের আনন চুমে অবিরল জলের আনন
আর এই দিঘি ঘিরে তরুগুলো হবে যেন নিগূঢ় কানন
ক্লান্ত- ক্লান্ত- হৃদয়ের পাখিদের মুছে দেবে কালো ছুরি দিয়ে কাটা জরায়ুর খেদ
হে সলিল, হে তরু, নিশীথ-চাঁদ, বলো ‘আর হবে না ক’ শব-ব্যবচ্ছেদ’
সুদীর্ঘ গাধার-টুপি নেড়ে-নেড়ে বিমর্ষ বামন বলে: ‘সে-সব নিষেধ-
হবে আরও শব-ব্যবচ্ছেদ, হবে আরও শব-ব্যবচ্ছেদ।’