পুরোনো দিনের ভূত

পুরোনো দিনের ভূত,- নদীর ভিতর দিয়ে চলিতেছে ধীরে
সাদা এক ঘোটকীর পিঠে চ’ড়ে- এ-ঘোটকী হবে না কি কালো এক ঘোড়া
বাদুড়ের মতো হয়ে কালো হয়ে রুগ্ন হয়ে- উড়িবে না রাত্রির তিমিরে
আমি তার পিঠে এক বামনের মতো ব’সে: সাদা দাড়ি, শ্লথ গোঁফ জোড়া

নদী ছেড়ে, স্বপ্ন ছেড়ে- টেলিগ্রাফের তারে- সমান্তরালে
উড়ে যাব আরও দূর টেলিফোন-সেতুর উদ্দেশে
একরাশ স্বপ্ন প্রেম- স্যাকারিন ছুঁড়ে ফেলে ভৌতিকে- গ্রে স্ট্রিটে মহিষের ছালে
ব’সে র’ব;- তবু এক অবসাদ;- সময়ের হাত থেকে তাস নিয়ে ভেসে-ভেসে-ভেসে

চারটি মানুষ আর একটি টেবিল- আর খানিকটা বেলোয়ারী আলো
অন্ধকার চালুনির থেকে চুঁয়ে- কাচের কুঁজোয় ভরা খানিকটা জল
এই স্নিগ্ধ সমাধান: সূত্র এক;- ধ’রে রাখ- বোলো না- ‘হারালো-‘
সূত্র এক;- যদিও মাথার ‘পরে এরোপ্লেন- রাস্তায় জনবল- শুধু গণবল-

আমাদের পাবে না ক’ তবু তারা- কোনও দিন- কোনও দিন খুঁজে
দশটায় আফিসের ট্রাম ধ’রে- ক্লাইভ স্ট্রিট জানালায় উড়ে যাব তোতার মতন
সারা-দিন মৃত্তিকার সমর্থিত ব্যাঙের মতন গন্ধে- লগ্ন ঘাড় গুঁজে
মোজা পায়ে- ডোরাকাটা কোট গায়ে- মৃত্তিকার পাব সমর্থন

তার পর অন্ধকার দেখা দেবে বৈদ্যুতিক তারে-তারে: মাকড়ের মতো ঘন জালে
(শান্তি এক): চারি-দিকে কুলুপ-আঁটার শব্দ- অবসর- বায়ু যেন স্নিগ্ধ মখমল
জাল নোট, ঘোড়-দৌড়, চিনেবাদামের গন্ধ… ঢের লোক চুপে জল ঢালে
ঢালে শুধু, খায় না ক’- শান্ত হয়ে জল খেতে লাগে ঢের বিশ্বাসের বল

সে-বিশ্বাস পায় কে-বা নদীর ভিতরে চ’লে ভূতের মতন
সাদা এক ঘোটকীর পিঠে চ’ড়ে- হেমন্তেরা না আসিতেই হব কেন ভূত?
এরোপ্লেনের শব্দ মাথার উপরে- গূঢ়- বন্দরের কেরোসিন- খবরের-কাগজের স্তন
জনগণ ট্রামের টিকিট কিনে দিন-রাত শেষ সিদ্ধান্তের দিকে ছুটিছে অদ্ভুত:

এই সব হৃদয়েরে বল দেয়; মনে হয় প্রেম স্বপ্ন স্যাকারিন- স্যাকারিন শুধু
কোনও এক গাঢ় ইচ্ছা সারা-দিন রাজপথে- রক্তে- রৌদ্রে- সম্ভাবনা পেয়ে
অসংখ্য শকুন-ভরা শহরের নীলিমায় জ্বলিয়া উঠিছে যেন ধু-ধু
তার পর শহরের রাত্রি আসে লক্ষ-লক্ষ সাটিনের স্পাইডারের মতো যেন ধেয়ে

কেরোসিন-বাক্সে চ’ড়ে কুষ্ঠরুগি হাওয়া খায়- পায়ে-চলা পথের গণিকা
খানিকটা দক্ষিণার স্বাদ পায়… পুরোনো বইয়ের স্টলে আমি
খুঁজে ফিরি কবেকার মিথ্যা প্রেম- মিথ্যা স্বপ্ন- মায়াবিনী কল্পনার শিখা
সে-সব ধূসর ব’লে আর এক বার দৃপ্ত জনস্রোতে নামি

জলমাকড়ের মতো সরু ঠ্যাং- ফিনফিনে আবের পাখনা তুলে যেন
নাচিতেছে- উড়িতেছে- লাটিমের মতো যেন ঘুরে-ঘুরে ঘুরিতেছি ফিরে
কোনও এক ইন্দ্রলোকে অপ্সরার নাচে তারা আমার এ-হৃদয়েরে নেয় না ক’ কেন?
আমি ঢের মজা দেব তাহাদের: মিশায়ে মাড়ায়ে নিয়ে অমৃতের সাথে কাসুন্দিরে

চারটি মানুষ আর একটি টেবিল- আর খানিকটা বেলোয়ারি আলো
অন্ধকার চালুনির থেকে চুঁয়ে- কাচের কুজোয় ভরা খানিকটা জল
এই স্নিগ্ধ সমাধান: সূত্র এক; ধ’রে রাখ- বোলো না- ‘হারালো-‘
সূত্র এক;- যদিও মাথার ‘পরে এরোপ্লেন- রাস্তায় জনবল- শুধু গণবল-

ঘাম ঝরে মনোবীজে অবিরাম- এই সব বীজের ভিতরে
যে-অঙ্কুর ক্রমে-ক্রমে জন্মিয়াছে- তারা-
ফুটপাথে ময়দানে- স্টিলের লাইনের ‘পরে ঝরে
তার পর এক দিন ডাইনোসর-হুড়োহুড়ি স্তব্ধ ক’রে জন্মিবে সাহারা?

ক্যাঙারুর মতো আমি- মতো তুমি- কঙ্করের পথে তবু কেন
খানিকটা প্রান্তরের ঘাস চাট?- দেহ বলে;- দেহ ক্যাঙারুর
ব্যঞ্জনারা আধো-মর্ত্যে আধো-স্বর্গে আমাদের- উরুবশী নর্তকীরা যেন
দিতেছে মহড়া গাঢ়- এক দিন অবশেষে খুঁজে পাবে মাননীয় সুর

ফাল্গুনের রৌদ্রে প্রিয় প্রকৃতির ইশারায় আমরা আবিষ্ট হয়ে নাচি
মানুষের আসা-যাওয়া-লিপ্ত পথে বোলতার মতো
চাক বেঁধে রাগে আর রোমহর্ষে… অলক্ষুণে দরজিটা কাঁচি
ছুঁড়ে মারে অন্ধকারে;- প্রকৃতি বিমূঢ় হেসে ভাবে: ‘কেন চেনে না, বল তো!’

ঘোর রাত: চারটি মানুষ আর একটি টেবিল- আর খানিকটা বেলোয়ারি আলো
অন্ধকার চালুনির থেকে চুঁয়ে- কাচের কুজোয় ভরা খানিকটা জল
এই স্নিগ্ধ সমাধান: সূত্র এক; ধ’রে রাখ- বোলো না- ‘হারালো-‘
সূত্র এক;- যদিও মাথার ‘পরে এরোপ্লেন- রাস্তায় জনবল- শুধু গণবল)