প্যারাডিম

সময়ের সুতো নিয়ে কেটে গেছে ঢের দিন
এক-আধবার শুধু নিশিত ক্ষমতা
এনেছিল,- তারপর নিভে- মিশে গেছে;
হৃদয় কাটাল কাল।
বালুঘড়ি ব’লে গেল: সময় রয়েছে ঢের।
সেই সুর দূর এক আশ্চর্য কক্ষের
চোখের ভিতরে গিয়ে স্বর্ণ দীনারের
অমোঘ বৃত্তের মতো রূপ নিয়ে নড়ে।

বালুঘড়ি ব’লে গেল: সময় রয়েছে ঢের,
সময় রয়েছে ঢের ইহাদের- উহাদের;
সমুদ্রের বালি আর আকাশের তারার ভিতরে
চলেছে গাধার পিঠে- সিংহ, মেষ, বিদূষক,
মূর্খ আর রূপসীর বিবাহে ঘটক,
ক্রীতদাস কাফরীরা তেল ব’য়ে আনে।
সময় রয়েছে ঢের- সময় রয়েছে ঢের-
সরবরাহের সব অগণন গণিকারা জানে।

চারিদিকে মৃগয়ার কলরব- সময়ের বীজ।
অনেক শিকারী আজ নেমেছে আলোকে।
আমিও সূর্যের তেজ দেখে গেছি বহুক্ষণ
ভারুই পাখির মতো চোখে;
ঘুরুনো আলোয় ঘুরে সংস্করে;- উড়িবার হেতু
যদিও নেই ক’ কিছু ক্ষিতিজ রেখার পথে আর।
বহু আগে রণ ক’রে গিয়েছিল বুদ্ধ আর মার;
অগ্নির অক্ষরে তবু গঠিত হয়েছে আজও সেতু।
ব্রহ্মার ডিমের সাথে একসাথে জন্মেছিল যারা ভালোবেসে
সেই স্বর্গ-নরককে আবার ক্ষালন ক’রে- প্রমাণিক দেশে
তারাই তো রেখে দেবে,-
মাঝখানে যদিও রয়েছে আজ রক্তিম সাগর,
বিশ্বাসীরা চোখ বুজে ব’য়ে নেয় মুণ্ড আর কঙ্কালের কেতু।

সম্রাটের সৈনিকেরা পথে-পথে চ’রে
খুঁজে ফেরে কোনও এক শুভলাঞ্ছন;
সফেন কাজের ঢেউয়ে মৃত্যু আছে- জানে;
তারও আগে র’য়ে গেছে জীবন-মৃত্যুর অমিলন;
যেন কোনও নরকের কর্নিশের থেকে ধীরে উঠে
কোনও এক নিম্নতর আঁধারের বিজৃম্ভিত কাক
আবার সাজাতে পারে দু’-মুহূর্ত ময়ূরের মতন পোষাক,-
সৈকতে বালির কণা নক্ষত্রের রোলে যদি এক-সাথে জুটে
আবছায়া, অগ্নিভয়, অন্ধকার- সময়ের হাতে ঠেলে ফেলে
অনাবিল অন্তঃসার নিতে দেয় খুঁটে।

সৈনিকের সম্রাটেরা স্থিরতর- তবু;
চারিদিকে মাতালের সাবলীল কাজ শেষ হ’লে
প্রতিধ্বনিও আর থাকে না ক’ যখন আকাশে
জলের উপরে হেঁটে মায়াবীর মতো যায় চ’লে।
(গভীর সৌকর্য দেখে মানবীয় আত্মা জাগে জন্তুদের ভিড়ে;)
অবিস্মরণীয় সব ইতিহাসপর্যায়ের দিকে
চেয়ে দেখে সর্বদাই পৃথিবীর প্রবীণ জ্ঞানীকে
ডেকে আনে তারা নিত্য নতুন তিমিরে;
নিপুণ ছেলের হাতে লাটিমের মতো ঘোরে দ্বৈপায়ন বলে
ঘুরায়ে নিবিড় সেই প্যারাডিমটিরে।