রবীন্দ্রনাথ

দেয়ালচিত্রের শীর্ষে পৃথিবীর কোনও এক আশ্চর্য প্রাসাদে
একটি গভীর ছবি মানুষ দেখেছে চিরকাল।
কেউ তাকে সূর্য ব’লে মনে করেছিল;
কেউ তাকে ভেবেছিল গরুড়ের উড্ডীন কপাল;
যখন সে অফুরন্ত রৌদ্রের অনন্ত তিমিরে
উদয় ও অস্তকে এক ক’রে দিতে ভালোবাসে;
সাদা রাজবিহঙ্গের প্রতিভায় বৈকুণ্ঠের দিকে উড়ে যায়,
হয়তো-বা আমাদের মর্ত্যপৃথিবীতে ফিরে আসে।
তাকাতে তাকাতে সেই প্রাসাদের মাধবী দেয়াল
আমাদের ইহলোক ব’লে মনে হয়- তবু সৃষ্টির অনন্ত পরকাল।

তোমার বিভূতি, বাক্-বেদনার থেকে উঠে নীলিমাসংগীতী,
আমাদের গরিমার বিকীরণে ডুবে, গ’ড়ে গেছে মানুষের প্রাণ
কী ক’রে কল্যাণকৃৎ অর্থের তরঙ্গে জেগে (মোম নিভে গেলে)
স্বাতী, শুক্রতারকার মতন ধীমান
মহা অবয়বদের থেকে বিচ্ছুরিত হ’য়ে উঠে আভা দিতে পারে:
শেয়াল শকুন শনি বানরের সমাজ ও রাষ্ট্রের ‘পরে;
সৃজনের আদি অন্তিমের রাঙা আগুনের মতো গোলাকার
ব্যাপ্ত এক সংগীতের বৃত্তের ভিতরে
পেয়ে যেতে পারে তার তিমি তিলে বিম্বিত ব্রহ্মাণ্ডের মানে;
সে সুর নিমীল হ’য়ে, লেলিহান হ’য়ে, নিমীলিত হ’তে জানে,

মহান, তোমার গানে; এই সব বলয়িত ক’রে চির-দিন-
অথবা যখন তুমি আমাদের দেশে সৃষ্টি শেষ ক’রে ফেলে
প্রকৃতির আগুনের উৎস থেকে উঠে এক দিন
নিঃস্বার্থ আগুনে ফিরে গেলে,
পতঞ্জলি, প্লেটো, মনু, ওরিজেন, হোমারের মতো
দাঁড়ায়ে রয়েছ তুমি একটি পৃথিবী ভাঙা-গড়া শেষ ক’রে দিয়ে, কবি
দানবীয় চিত্রদের অন্তরালে আপনার ভাস্বরতা নিয়ে;
নিকটে দাঁড়ায়ে আছে নিবিড় দানবী।
অথবা ছবির মতো মনে হয় আমার অন্নপানদোষে ম্লান চোখে:
অল্প আলোকের থেকে পুরাণ-পুরুষ সব
চ’লে যায় অনুমেয়, অজ্ঞেয় আলোকে।