রাত্রি, মন, মানবপৃথিবী

এ অন্ধকার জলের মতো; এই পৃথিবীর সকল কিনার ঘিরে
নরক নগর তাপী পাপীর শান্ত শুশ্রূষায়
কোথার থেকে এসে কোথায় লক্ষ্যে চ’লে যায়;
সকল উত্তেজনা আসে স্নিগ্ধ শরীরে।

কে ব্যাহত পাখির মতো প্রাণাকাশে ওড়ার পথে সময়শায়কে;
কারা কোথায় আলোককণার মতন, সূর্য হ’তে
জন্ম পেয়েই হারিয়ে গেছে অন্ধ রক্তস্রোতে;
বুদ্ধিজীবী নষ্ট হ’ল কোথায় মনের গোলকধাঁধার ছকে-

সবের কাছে নিরভিমান রাত্রি এসে নমিত হ’তে বলে;
কথা ভাবায়; কথা ভাবার সর্বনাশে শান্তি কোথায় আছে?
তবু এসো অনেক কাজের পরে অন্তরাশ্রয়িতার কাছে;
মৃত্যু ঘুমের অতীত ব্যথা ক্ষয় পাবে কি সহজ সরলে?

এখানে কোনও আকাশসারি ইন্দ্রজাল নেই;
এখানে কালের সিঁড়ির ‘পরে মধ্যপথে অগম সিঁড়ির দিকে
তাকিয়ে বিষয় ভেবে নিতে হয়েছে নতুন যানের প্রতীকে;
মৃত্যু নেই, মায়া নেই, ইতিহাস অমোঘ তবু ঠিক এ কারণেই

ক্লান্তি নেই; মনোনদীর দু’-পার ঘিরে ছাউনি পড়েছে।
এপারে এরা জীবনপ্রেমিক: ঘোষনা ক’রে বলে;
ওপারে ওরা এই পৃথিবীর নিষ্পেষিত নরনারীর দলে;
সিদ্ধি চায়: গণনাহীন মৃত্যুসেনা হাজির করেছে।

অনেক বিনাশ সাঙ্গ হ’লে অন্ধকারে নতুন জাতক, ঢল
তবুও অনেক প্রাণের প্রয়াস করুণা প্রেম সহিষ্ণুতা আলো
দেখেছে আবার নবনবীন নৈরাশ্যে হারাল;
নাবিক ক্লান্ত; নদী কি নিষ্ফল।

অন্ধকারে হৃদয় এখন নিজের কাছে থেমে
আশা আলো হারিয়ে যতই শ্লেষ পরিহাস শক্তিতে কঠিন
হয়ে সন্ততিদের কাছে পিতৃলোকের ঋণ
আঁধার জলাঞ্জলি ভাবে- ততই নদী জনমানব প্রেমে

নিহিত হয়ে নতুন জলকণিকারাশি বানিয়ে নিতে চায়।
আবার কি তা রক্তকণা হয়ে গেল? ক্ষালন ক’রে অন্ধকারে জ্ঞানী
হয়ে সে দেখছে ইতিহাসের বিরাট হয়রানি
নবীন বীজের মতো আজও মানবতার বিবর্ণ আত্মায়।

সত্যযুগ । শারদীয় ১৩৫৭