রাত্রির বাতাস আসে

রাত্রির বাতাস আসে- ধীরে আসে- টের পাই- চ’লে যেতে পারি
এই পথ ছেড়ে দিয়ে তিন বার তিন ধনু দূরে এক পথে
কিংবা আরও দূরে-
আরও ঢের দূরে- (বৃত্তের পরিধিটিকে তবু কিছু গোল ব’লে মনে হবে না ক’)
যেমন গভীর সত্য যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
তেমনই প্রশান্ত, স্বচ্ছ বার হয়ে পড়িবার পথ

কিন্তু- তবু- সবার প্রথমে সেই প্রবেশের পথ চাই
(প্রথম প্রবেশ ক’রে তার পরে নির্গমন)
অসংখ্য নক্ষত্রে ঐ আকাশের মাইলগুলো পারদের মতন ধবল
প্রতিটি তারকা যেন কোনও এক মনস্বিনী গণিকার বার,
তার পর খানিকটা পথ- তার আওতার পার:
সিংহ-বৃষ-কৰ্কটের নিট অন্ধকার

পৃথিবীও দ্বার খুলে রেখে গেছে অরণ্যে, লোষ্ট্রে, জলে, অগ্নিবিম্বে, মানুষের মনে
একটি ধূসর পাখি আমলকী-ডালে ব’সে শরীরের সম্প্রসারণে
আকাঙ্ক্ষা জানায়ে যায় অন্তরীক্ষে- অন্তরীক্ষ নিয়ে যায় নক্ষত্রের দিকে
বিদ্যুতের ঢেউয়ে তুলে আকাঙ্ক্ষায় অগ্রিম পাখিকে

এই সব প্রবেশের পথগুলো ভালো ক’রে মনোযোগে খুঁজে
মাটির উপর থেকে কোনও এক মিনারের নিস্তব্ধ গম্বুজে
গম্বুজের থেকে কোনও কস্তুরীর মতো কালো পরিপূর্ণ মেঘে
তার পর রসাতলে- যেইখানে কল্মাষের উনুনের কাছে
কুকুর সম্রাট ভেড়া অধ্যাপক হাঁটু গেড়ে আছে
দুই হাত বিলম্বিত ক’রে দিয়ে খাড়া চুলে- চোখ মেলে জেগে
সেখানে সবের ছায়া স্থির চোখে-
ঐ দেখ আরও স্থির গোলাকার চোখে চ’লে যায়
যা হয়েছে- যা হতেছে- অথবা যা হবে
সে-সবের মাঝখানে ধরা প’ড়ে গেছে তারা তবে।

এরা তবু মৃত্যু নয়
মৃত্যুর সমূহ রাজ্য অধিকার ক’রে আছে যারা
তাহাদের বহুলতা একটি ধবল রঙে মিশে গেছে
আকাশের সব-চেয়ে জ্যোতিষ্মান জ্যোতিষ্কের ভিড়ে
যেই শব র’য়ে গেছে- সেই শব নেই ক’ শরীরে।

এরা তবু মৃত্যু নয়
এরা শুধু জীবনের পারে আরও জীবনের সং
এই সব মানুষের ভাঙা জানু, ভুল ভুরু, চোখের ভড়ং
ঘড়ি ধ’রে তিনটি ঘণ্টা পারে হাসাতে কাঁদাতে এক অবলীলা-ভরে
এরা সব প্রবেশের পথ চায়- আরও দূরে-
নয় বার নয় ধনু দূরে এক হাওয়ার ভিতরে
কোনও এক নর্তকীর কথা ভেবে চোখ বুজে নিয়ে
যেতে চায় ব্রহ্মাণ্ডের গোল কারুকার্যে হারিয়ে।