রায়দের পরিবার

রায়’দের অত বড়ো পরিবার- বাতি দিতে কেউ আর নাই
তিন-মনি পলু রায় মরেছিল- মনে পড়ে নব্বই বছরে
সুদীর্ঘ মানুষ এক- অমন দেখি নি আমি বাঙালির ঘরে
তাহার চিতার থেকে- অবহিত হয়ে আমি খানিকটা কঙ্কালের ছাই

এনে রেখে দিছিলাম পরিস্ফুট কাঁচের বৈয়মে
সেই রাতে মোম জ্বেলে একটি মনেই আমি লিখিতেছি ধীরে
এমন সময় এক শব্দ হল বহ্নিমান রাতের সমীরে
বৈয়মটা ফেটে গিয়ে মিশে গেল খাড়া ঝিলিকের গাঢ় রঙে

বছর তিনেক পরে এক দিন- বৈশাখের চলন্ত বাতাসে
হামিদের পাগলা ঘোড়াটা মাঠে যখন গন্ধর্বী হয়ে ঘোরে
রায়-অর্ধাঙ্গিনী যেন উড়ে গেল আরবের গালিচায় চ’ড়ে
হয়তো-বা শমনের ধাক্কা খেয়ে উল্টায়ে- নরকের ঘাসে

পাঁচটা বছর আরও কেটে গেল- মোটরের বিবর্ণ মডেল
বিক্রি ক’রে- টাট্টু’র পিঠে চ’ড়ে হ্রস্বতর দানবের মতো
বিশ্বেশ্বর রায় এক পোষ-রাতে হল স্বর্গগত
ধনেশ পক্ষী যেন ম’রে গেল- গৃহিণীর হাতে শুধু মূল্যবান তেল

র’য়ে গেল- বেশি নয়- অনুজেরা বোম্বাই টেহেরান আলেপ্পো’র থেকে
নির্জন সমুদ্রে ভেসে- দুপুরের- নেমে এল রায়-পৃথিবীতে
কিছু ফুল ঢেলে দিতে- কয়েকটা আচারের শিশি তুলে নিতে-
‘যেখানে মানুষ জন্মে সে-দেশের মৃত্তিকাই ফেলে তারে ঢেকে-‘

অবাক বিহ্বল চোখে বড়ো-বড়ো নীল গগনের ফাঁক দিয়ে
শুধাল কয়েক দিন অমায়িক বিদেশি পাখির মতো তারা পরস্পরে
অনেক জারক তারা জয় ক’রে তবু শেষে সময়ের অভদ্র নিগড়ে
বেঁধে গেল- ভাঙা দুর্গে ফিরে এসে বালি ক্বাথ ঝামা দিয়ে আত্মা শানিয়ে

একে-একে উড়ে গেল অতিকায় হাড়গিলা- কোনও এক প্যাগোডা’র পানে
নক্ষত্রের শান্ত রাতে কাশ্যপসিন্ধুর মতো যেন এক মধ্যম আকাশে
গলায় স্ট্রাপের সাথে অর্থনীতি, প্লানচেট, বন্দুক ভারি হয়ে ভাসে
ইহুদি গণিকা কেউ গেল না ক’ তাহাদের পিছে আর জ্যোতির সন্ধানে

এই পরিবার থেকে অনেক অকালমৃত শিশুদের শব
প্যাক-করা বাক্সের অন্ধকারে ঘুমাতেছে মাটির বিবরে
কিম্বা শেয়ালেরা সেই কঞ্চিগুলো নিয়ে কোলবালিশের মতো কাত ক’রে
অনেক শীতের রাতে উচ্চতর মানবিক আলোচনা করে অনুভব

রমা রায় আছে শুয়ে মুর্গিহাটা’র লেপে রোম ঢেকে মানিকতলায়
আমজেদ শোভানের দ্বৈমাতুর প্রেমে তার গর্ভ থেকে সপ্তম সন্তান নেমে আসে
রায়’দের ক্রোধ অহঙ্কার নাসা স্ফুরিতেছে শ্মশানের পাথর-গোগ্রাসে
ফাঁপা পেট তবু লঘু করিল না কেন তারা মিল্ক-অফ-ম্যাগনেসিয়ায়

দুর্গের বাতাস থেকে ঢের দূরে অগণন আশ্চর্য বিকাশে
রায়’দের আরও ঢের বালিকার- যুবকের- সমাধি ছড়ায়ে
নব্বই বছর যদি বেঁচেছিল পলু রায় বজ্ৰ হেনে- দানব মেঘের মতো গড়ায়ে-গড়ায়ে
এরা তবে অন্যতর খেলোয়াড়- সমীচীন, ক্লান্ত, সাদা বিহঙ্গের পাশে।