সেইখানে রয়ে গেছে

সেইখানে রয়ে গেছে অতীব প্রশান্ত এক ঘর
নয় মাইল গোল এক হ্রদের ভিতরে
এয়োদশ শতাব্দীর থেকে উঠে আমি
আবার উনিশ বিশ শতকের পরে
চেয়ে দেখি তেমনই রয়েছে সেই হ্রদ
স্বচ্ছ জল তেমনই অমেয়, গোলাকার
মানুষেরা বংশাল সৃষ্টি করে এই দিকে, আহা
ক্রমে-ক্রমে বেড়ে যায় ইস্পাতের ধার

তবু হ্রদ অন্ধকারে বেড়ালের চোখের মতন
নীলাভ করুণ আলো খুলে
হয়তো-বা হাঁসিনকে বুকে তুলে লয়
পরর- পরর রোল তুলে
আমি সেই শব্দ শুনি- অজ্ঞতায়- আধো
(বয়স্যকে বলি আমি)- হাত রেখে হৃদয়ের ‘পর
কোথাও রয়েছে গোল নয় মাইল জলে
হুডিনিরও চেয়ে (কিছু বেশি) জাদুকর
অথবা তারের শব্দ মাথার উপরে?
কিংবা ডাইনামো’র থেকে বাগর্থ হতেছে ক্ৰমে ফাঁস
অথবা যে-সব শব্দ কলকাতা কানে
শুনেও শোনে না বারো-মাস
ঘোড়া’র-ট্রামের থেকে ইলেকট্রিক-ট্রামে
উভয়ত চ’ড়ে যারা গিয়েছে বুড়িয়ে
অনেক অচেনা ধ্বনি তাহাদের জানা
(কিন্তু, তবু) পরর- পরর- রর কী এ?
ব’লে সালিশির লোভে পুরাতন কোনও এক নক্ষত্রকে খুঁজে
চেয়ে দেখি মৃগশিরা সরমা ও স্বাতী
প্রথমটি শিকারির গুলি খেয়ে ক্যাম্পে লুটায়
বাকি দু’টো সৌম্য সেবাসদনের ভিতরে পোয়াতি
সেবাসদনের সাদা বিছানায় ঢাকা
আকাশের ত্রিসীমানায়ও নেই আজ আর কেউ
পাশের বাড়ির সেট-এ ‘লর্ড, হাউ হাউ’-রা
চাঁদের কাস্তে দেখে করে ঘেউ-ঘেউ
তাদের দেয়াল ছাদ উঠে গেছে- যত দূর গেলে
অবশেষে জীয়ন-মারণ ঠেলে হওয়া যায়- সৎ
মাঝখানে জ্যাম হয়ে তুমি আর আমি
টেলিফোন, মেগাফোন, মাইক্রোফোন-এ জনমতামত
শুনে যাই; (ঘোড়া’র-ট্রামের থেকে এ-তাবৎ ইলেকট্রিক-ট্রাম)
প্লাম্বারের কাজ শেষ হয়ে গেলে- ইঞ্জিনের খট খট খট
অনেক মেয়র পুড়ে ছাই হয়ে গেলে
পুনরায় ভোটের ব্যালট
(এ-সব অক্লান্ত শব্দ) শোনা যায় হোরাপল ঘুরে
ব্রহ্মার হৃদয়ে সব মুহূর্তের মতো মনে হয়
তবুও ব্রহ্মা’র আগে সৃজনের জল পান ক’রে
তাহার মৃত্যুর পরও আমরা অব্যয়
সহসা তাকায়ে দেখে নয় মাইল ঘের-দেওয়া জলে
কুবলাই খান- পিতৃ-পিতামহদের ঘর
চীনে-মাটি দিয়ে গড়া বাসনের ‘পরে এক ছবি
তবুও তা ছবি নয়- এমনই রগড়।